
স্টাফ রিপোর্টার :: ছাত্রনেতা, সমন্বয়ক, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক সহ কূটকৌশলে নানা পরিচয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, ভয়ভীতি ও অর্থ আদায়ের ভয়ংকর এক চক্রের কেন্দ্র বিন্দুতে উঠে এসেছেন বরিশালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মারযুক আবদুল্লাহ। একজন চাকরিপ্রার্থীর সরাসরি অভিজ্ঞতা, পুলিশের মামলা এবং সংগঠন থেকে তার পদ স্থগিতের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে এই তরুণ বহিষ্কৃত নেতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরাধ জগতের কাহিনি।
চাকরির প্রলোভন দিয়ে ফাঁদে ফেলাঃ-
চলতি বছরের জুন মাসে বরিশালের রুপাতলীতে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন ফেসবুকে ছড়ায়। বিজ্ঞাপনটি ছিল একজন পার্সোনাল পিএস নিয়োগের জন্য, বেতন ২০ হাজার টাকা। চাকরি প্রার্থী তানজিয়া ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে মারযুক নিজেকে পরিচয় দেন বরিশালের “সমন্বয়ক” হিসেবে এবং দাবি করেন—বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে তার বিশাল প্রভাব রয়েছে। আমাদের দুজনের মাঝে কথা হওয়ার পরে আমি তানজিয়া সাড়া জুন মাসের ১৫ তারিখ চাকরিতে জয়েন করি। ঐ দিন আমরা পুলিশ লাইনে ইউরো কিচেনে মিট করেন। তখন মারযুক আব্দুল্লাহ তাকে বলেন, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, পুলিশ কমিশনার, জজ, ওসি—সবাই আমাদের হাতে। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি!” আমার সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই , আমি কতটা ক্ষমতাশীল লোক আমার সাথে থাকলে দেখতে পারবে।
মারযুক চাকরি প্রার্থীকে জানায়, সিটি কর্পোরেশনের বড় বড় কাজ এসেছে তিনি ‘কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ’ নামের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে এগুলো পাবেন। চাকরি প্রার্থীকে অফিসে না নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কথা বার্তা চালান তিনি বহু দিন । সপ্তাহর পর সপ্তাহ ধরে চলা এই বৈঠকগুলোর সময় দেখা যায়, মারযুকের সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী ও অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকজন।
অপকর্মের ভয়ংকর চিত্র উদঘাটনঃ-
একদিন এমন একটি মিটিংয়ে তানজিয়া জানতে পারেন, মারযুক রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের নামে মামলা দিয়ে টাকা দাবি করেন এবং পরে সেই মামলার নাম ‘কেটে দেওয়ার’ নামে আবার মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন। একেকজনের কাছে ২ লাখ, ৫ লাখ, ১০ লাখ এমনকি ২০ লাখ পর্যন্ত টাকা চাওয়া হত।
তানজিয়ার এই সমস্ত ঘটনা দেখার পর সিদ্ধান্ত নেন চাকরি আর করবেন না। এরপর তিনি চাকরি ছাড়তে চান ও বেতন চান, তখন মারযুক তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, “তোমাকে বরিশাল শহরে পাঁচতলা বাড়ি করে দেব, কিন্তু মুখ খুললে রেহাই পাবে না। সাংবাদিক, পুলিশ, প্রশাসন—সব আমাদের হাতে।”
মারযুক তাকে আরো বলেন- তার ভাই সিনিয়র সাংবাদিক সুলতান খান। বরিশালের সাংবাদিক নেতাদের সাথে তার সুসম্পর্ক। কোনোন সাংবাদিক কিছু বললে, সুলতান ভাই তাদের সামলে নেবেন।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এই সাংবাদিক সুলতান খানই, মারযুকের সহকর্মী এবং সব অপকর্মের সাক্ষী। তারা মিলে বরিশালে অপকর্ম করে বেড়াত। তানজিয়াকে হুমকি দিয়ে সুলতান খান বলেন, তুমি বেশি বাড়াবাড়ি কইরো না। বিষয়টি তিনি বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনিচুর রহমান খান স্বপন খানকে অবগত করলে তিনি বলেন- সুলতান খান আমাদের কোন সদস্য নেই।
সংগঠন থেকে পদ স্থগিত, পুলিশের মামলায় অভিযুক্ত মারজুক আব্দুল্লাহ :-
বরিশালের ছাত্র সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর পক্ষ থেকে জানা যায়, ১৪ মে হঠাৎ করে মারযুক আব্দুল্লাহ ২৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায়। অভিযোগ ওঠে মামলায় আসামিদের নাম ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলন করছে মারয়ুক। পরবর্তীতে ২০ মে তার সংগঠন থেকে মারয়ুককে সাংগঠনিক পদ থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও, মারয়ুকের বিরুদ্ধে টোল প্লাজায় ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে, মারজুক, মামুন ও শিপন মিলে একটি পেশাদার ডাকাত চক্রের সদস্য। পুলিশ সিগন্যাল দিলে মারজুক মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়।
ভয়ভীতি ও হুমকির অভিযোগ মারজুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে :- চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও মারজুক বারবার ভুক্তভোগীকে ফোন করে দেখা করতে চাপ দিতে থাকেন। “বরিশালে থাকতে চাও? বেশি বাড়াবাড়ি কইরো না।” ( ভুক্তভোগীর ভিডিও স্টেটমেন্ট আজকের ক্রাইম টাইমস এর হাতে আছে)
জনমনে আতঙ্ক ও প্রশাসনের কাছে দাবি- একজন ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসা মারযুকের কর্মকাণ্ড বরিশালজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে গঠিত মামলাগুলোর যথাযথ তদন্ত এবং এই চক্রের মূল হোতাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন একাধিক সচেতন নাগরিক সমাজ।