
নিউজ ডেস্ক :: এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মানুষিক নির্যাতন, বিদ্রুপ ও অশিক্ষক সূলভ আচরণের শিকার সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের মেধাবী পরীক্ষার্থীরা। এ নিয়ে মানববন্ধনসহ আলন্দোলনে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এইচএসসি পরীক্ষায় বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে শুরু থেকেই চলছে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের মেধাবী পরীক্ষার্থীদের ওপর মানুষিক নির্যাতন, কথায় কথায় বহিস্কারের হুমকি, অশালীন ভাষায় বিদ্রুপ ও কক্ষ পরিদর্শকদের অশিক্ষক সূলভ আচরণ। এছাড়া মডেল কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষক, খণ্ডকালীন শিক্ষকসহ বহিরাগত বিভন্ন স্কুল ও মাদ্রাসার অপ্রশিক্ষিত ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শাখার শিক্ষকদের দ্বারা কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে বলে পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ।
অধিকাংশ নিরুপায় ও সচেতন অভিভাবকগণ সন্তানের ফলাফল, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকদের প্রহসনমূলক আচরণ হজম করে যাচ্ছেন।
সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে এক অভিভাবক জানান, বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের অহেতুক চরমভাবে মানুষিকভাবে নির্যাতন ও অপমান করা হয়। বহিস্কার করার হুমকি দেয়া হয়। কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেয়ার জন্য বহিরাগত বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক থাকা স্বত্বেও মডেল স্কুল এন্ড কলেজের স্ব স্ব বিষয়ের শিক্ষকরা স্ব স্ব বিষয়ের পরীক্ষার দিনও হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে খারাপ ফলাফল করানোর লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ও হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এই অভিভাবক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, ইংরেজী ২য় পত্র, রসায়ন ১ম পত্র, হিসাব বিজ্ঞান ১ম পত্র, পদার্থ ২য় পত্র, অর্থনীতি ২য় পত্র, জীব বিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষায় বরিশাল সরকারি মডেল কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষকসহ খণ্ডকালীন শিক্ষক, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পলাশ দেবনাথ শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ সকল শিক্ষকদের ব্যাপারে পরীক্ষার্থীরা জানান, কক্ষ পরিদর্শকগণ কথায় কথায় আমাদেরকে বলেন- গত বছর জুলাই আন্দোলন করেছো না? রাজপথে আন্দোলন করেছো না? এখন খাতায় আন্দোলন করো নইলে রাজপথে গিয়ে আন্দোলন করো। পরীক্ষার্থীরা আরো জানান, এই সকল শিক্ষক মূলত আওয়ামী লীগের দোসর ও সমর্থক। তারা রাজনৈতিক ও হাতেম আলী কলেজের ওপর প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে অধিকাংশ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে বরিশালে জুলাই আন্দোলনে হাতেম আলী কলেজ ও বিএম কলেজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলো।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষিক জানান, চলমান এইচএসসি পরীক্ষার হল সুপার মো: মাসুম বিল্লাহ ( প্রভাষক, অর্থনীতি) হলেও একটা অদৃশ্য শক্তির ইচ্ছানুসারে কক্ষ পরিদর্শকের তালিকা করেন আওয়ামী লীগের দোসর স্বয়ং অধ্যক্ষ আবু মামুন। এছাড়া তিনি তার নিকটজন চরকাউয়ার কিছু মাদ্রাসার অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের দ্বারাও কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের দোসর শিক্ষকদের আসন্ন প্রাণী বিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, পৌরনীতি, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, ইসলাম শিক্ষাসহ বাকী এইচএসসি পরীক্ষাগুলোতে মডেল কলেজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে হাতেম আলী কলেজের ওপর প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাবের কারণে পরীক্ষার হলে কড়াকড়ি গার্ড দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু মামুন।
এছাড়া বরিশালের জুলাই আন্দোলনের রূপকার হাতেম আলী কলেজের রেজাল্ট ও শিক্ষার্থীদের দেখে নেবেন বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।
ওই শিক্ষিক আরো জানান, এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দুদিন আগে পরীক্ষার্থীদের ওপর নির্দয় না হতে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ বহিরাগত সকল কক্ষ পরিদর্শককে বিশেষ কর্মশালায় অনুরোধ করেন। প্রভাষক শাহজালাল ও প্রভাষক মাসুম বিল্লাহ এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকলেও অধ্যক্ষ আবু মামুন হাতেম আলী কলেজের নাম শুনলেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
এ ব্যাপারে শিঘ্রই বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র হতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও হল সুপারকে অব্যহতি চেয়ে মানববন্ধন করবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর ছাত্র-অভিভাবকরা স্মারকলিপি প্রদান করবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু মামুন, প্রভাষক মাসুম বিল্লাহ ও শিক্ষক শাহজালালকে কল করা হলেও রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃহারুন অর রসিদ হাওলাদার বলেন, মডেল কলেজ কেন্দ্রে যা শুনেছি তা দুঃখজনক। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।
এ ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, পরীক্ষার্থীদের সাথে তাদের আচরনের অভিযোগ আজকের নয়। আমি মডেল কলেজ কেন্দ্রের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ও অধ্যক্ষকে পরীক্ষার আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম। আজ এখন আবারও বলতেছি।ভবিষতে ওখানে পরীক্ষা কেন্দ্র রাখার ব্যাপারে ভাবতে হবে। অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।