
নিউজ ডেস্ক :: চট্টগ্রামের বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানমের আগমন ঘিরে রাতারাতি নির্মাণ করা হয়েছে একটি অস্থায়ী সড়ক। স্থানীয়রা বলছেন, ডিসির গাড়ি যেন কাদা না মাড়ায়, সে জন্যই বৃষ্টির মধ্যেই রাতের আঁধারে মাঠের ভেতর দিয়ে ইট-বালুর রাস্তা বানানো হয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার প্রধান সড়কসংলগ্ন এই বিদ্যালয়ের মাঠে প্রায় ৩৩ জন শ্রমিক মিলে রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ করেন। এতে ব্যবহার করা হয় আনুমানিক ১৩ হাজার ইট ও ২০ গাড়ি বালু। ব্যয় হয় প্রায় তিন লাখ টাকা।
পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বিদ্যালয়ে আয়োজিত জয়ন্তী কর্নার ও স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় অংশ নেন। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোতোষ দাশ বলেন, মাঠে কাদা থাকায় ডিসি মহোদয়ের গাড়ি ঢুকতে পারত না, তাই অস্থায়ীভাবে এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এটা আমরা করিনি, প্রশাসন করেছে। দয়া করে বিদ্যালয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করবেন না।
স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে এমনভাবে রাস্তা নির্মাণ অনভিপ্রেত। তারা প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকলেও হঠাৎ করে একদিনের জন্য ভিআইপির যাতায়াতে এতো ব্যয়বহুল উদ্যোগ কেন?
তবে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছিল বলেই রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি মাঠের মাঝখানে নয়, পাশে করা হয়েছে। এই কাজের জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়নি, একটি প্রকল্পের আওতায় করা হয়েছে।
অনেক শিক্ষার্থী মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ে এসে মাঠে নতুন রাস্তা দেখে বিস্মিত হন। স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, আমরা ভেবেছিলাম মাঠ সংস্কার হচ্ছে, পরে দেখি ডিসি আসছেন তার গাড়ি যাতে কাদায় না পড়ে, সেজন্য এমন আয়োজন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা হেঁটে আসুক কাদার ভেতর দিয়ে, তাতে কী? ডিসি তো জেলার রাজা। তিনি তো কাদা মাড়াতে পারেন না। তাই এক রাতেই তিন লাখ টাকা খরচ করে মাঠের ওপর ইট-বালুর রাজপথ! বছরের পর বছর মাঠে জলাবদ্ধতা, কিন্তু তখন কোনো প্রকল্প চোখে পড়ে না। অথচ এক দিনের ভিআইপি সফরে এমন তৎপরতা দেখে মনে হয়, উন্নয়ন মানে শুধু উচ্চপদস্থদের আরাম।