
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালজুড়ে মাদকের রাজত্ব, প্রতিদিন চলছে বেচাকেনা
বরিশালে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার জনমনে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। শহরের কেডিসি, পলাশপুর ও রসুলপুর এ তিনটি সরকারি কলোনির পাশাপাশি শহরের অর্ধশতাধিক স্পটে প্রতিদিন চলে মাদক বেচাকেনা।
একদিকে যেমন বাড়ছে সেবনকারীর সংখ্যা, তেমনি অপরাধও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। গত এক সপ্তাহে মাদক সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে শহরে দুটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
শুধু পুরুষ নয়, ভয়াবহ হারে বাড়ছে নারী মাদকসেবীদের সংখ্যাও। মাদক সেবনের করুণ পরিণতির শিকার হয়ে অনেকেই চিকিৎসার জন্য নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হচ্ছেন।
বরিশালের নগরীর বাসিন্দা আলেয়া বেগম, যিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন, জানালেন তার জীবন কীভাবে মাদকে ধ্বংস হয়েছে।
আলেয়া বেগম বলেন, ‘মাদক আমার সংসার, সন্তান সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। এখন চেষ্টা করছি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। তরুণ-তরুণীরা একবার জড়িয়ে পড়লে বের হওয়া কঠিন, তাই আগেই সাবধান হওয়া উচিত।’
জানা যায়, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, প্যাথেডিন সব ধরনের মাদকের অবাধ চলাচল ও ব্যবহার এখন বরিশালের নগরজীবনের এক অপ্রকাশ্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শহর নয়, জেলার প্রতিটি উপজেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই ব্যাধি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করলেও, বাস্তব চিত্র বলছে মাদকের নীরব রাজত্ব থামছে না, বরং দিন দিন তা আরও ভয়ানক রূপ নিচ্ছে।’
বরিশালের নিউ লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্র-এর চেয়ারম্যান মর্তুজা জুয়েল বলেন, ‘গত এক বছরে শুধু আমাদের কেন্দ্রে দেড় শতাধিক নারী চিকিৎসা নিয়েছেন। আগে ১০ জনের মধ্যে ১ জন ছিলেন নারী, এখন এই সংখ্যা ৪-৫ জনে গিয়ে ঠেকেছে।’
বরিশালে মাদকের অভিযান মাঝে মাঝেই হয়, তবে সেসব কার্যকর নয় বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ উঠেছে, কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মাদক নির্মূলকর্মীরাও জড়িত এই চক্রে। ফলে ধরা পড়ে ছোটখাটো ব্যবসায়ী, কিন্তু রাঘববোয়ালরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী জানায়, আমাদের ওপরে যারা থাকে, তাদের সহযোগিতা ছাড়া এভাবে চালানো সম্ভব না।
এ বিষয়ে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পরিতোষ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, তবে চাহিদা কমানো না গেলে সরবরাহ থামানো কঠিন।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে মাদক সংক্রান্ত লেনদেনকে কেন্দ্র করে দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে।