ঢাকাবুধবার , ৬ আগস্ট ২০২৫

‘ক্ষ ম তা র ল্যান্ডমার্কে’ এখন শুধুই নীরবতা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ৬, ২০২৫ ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: একসময় যে বাড়িগুলো ছিল চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র, নেতাকর্মীদের আনাগোনায় মুখর—আজ সেগুলো যেন নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধতা আর ভাঙচুরের স্মারক। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। সরকার পতনের দুই দিন আগ থেকে শুরু হওয়া ভাঙচুর, লুটপাট ও আতঙ্ক নেমে আসে জুলাই আন্দোলন নস্যাৎ-চেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া নগরীর প্রভাবশালী চার আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে। সেসব বাড়ি এখন যেন পরিত্যক্ত নিঃসঙ্গ স্মৃতিস্তম্ভ।

নাছিরের মোহাদ্দেস ভিলায় এখন সুনসান নীরবতা: চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে একটু সামনে এগোতেই চোখে পড়ে আলিফ বিপণি সেন্টার নামের বহুতল ভবন। এই ভবনে প্রবেশ করে একটু যেতেই চোখে পড়ে মোহাদ্দেস ভিলার নামফলক। এ ভিলাতে থাকতেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। একসময় এ বাড়িটি নেতাকর্মীদের পদচারণায় জমজমাট থাকত। ভেতরে প্রবেশ করতেই হিমশিম খেতেন নেতাকর্মীরা। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে বাড়িটি সুনসান নীরব।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিন বাড়িটি ঘুরে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে নীরবতা ভর করেছে। বাড়ির ভেতরে নেই মানুষের কোনো আনাগোনা। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একজনকে পাওয়া গেল। বাপ্পি বড়ুয়া নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে আ জ ম নাছিরের বাড়ির গৃহকর্মী পরিচয় দিলেন। বাপ্পি বলেন, এই বাড়িটি আ জ ম নাছিরের পারিবারিক বাড়ি। এখানে তার ছয় ভাইয়ের পরিবার বসবাস করে। গত বছর ৫ ও ৬ আগস্ট কিছু লোক বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা, জানালা, গার্ডরুমসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

সাবেক ‘নগর পিতার’ বাড়ি এখন পরিত্যক্ত ভবন: নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ের ঐতিহাসিক বহদ্দার বাড়িটি সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিমের পারিবারিক বাড়ি। পাশাপাশি তিনটি ভবনে তারা তিন ভাই বাস করতেন। প্রথম ভবনটিই রেজাউল করিমের। তিনি যখন মেয়র ছিলেন, তখন বেশ সরগরম থাকত বাড়িটি।

বাড়ির সামনে থাকত অনুসারী আর নেতাকর্মীদের গাড়ির সারি।

কিন্তু সেই বাড়িটি এখন সুনসান। তালাবদ্ধ ক্ষতবিক্ষত ভবনটি দেখলে মনে হয় পোড়া কোনো ভূতুড়ে বাড়ি।

সরেজমিন দেখা যায়, দ্বিতল ভবনের ভেতরের পুরো অংশ ও আশপাশে ময়লা আবর্জনায় ভরা। জানালার কাচগুলো ভাঙা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির দুদিন আগেই রেজাউল করিমের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর ৫ আগস্ট থেকে টানা কয়েকদিন চলে ভাঙচুর ও লুটপাট। রেজাউলের বাড়ির পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় তার অন্য দুই ভাইয়ের ভবনও। আগে তিন ভাইয়ের ভবনের মাঝে সীমানা প্রাচীর না থাকলেও ৫ আগস্টের পর রেজাউলের ভবনের পাশে সীমানা প্রাচীর তুলে দেন অন্য ভাই। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগপর্যন্ত নগর পিতা থাকা রেজাউল করিমের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানেন না কেউ।

রেজাউল করিমের বাড়ির সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া গেল না। রেজাউলের বাড়ির ঠিক বিপরীত পাশের বাড়িতে গেলে তারা রেজাউল সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হলেন না। পরে এক ভাইয়ের ভবনে গেলে রেজাউলের আত্মীয় পরিচয়ে একজন বলেন, তাদের তিন ভাইয়ের ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুরের পর ভবনগুলো সংস্কার করতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। তবে রেজাউল করিমের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান তিনি। কোথায় আছেন তাও জানেন না।

নওফেলের বাড়িজুড়ে শূন্যতা: নগরীর ২ নম্বর গেটের মেয়র গলিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের বাড়ি। এ বাড়ির অবস্থাও প্রায় অন্য দুই নেতার বাড়ির মতোই। বিশাল বাড়ি বাইরে থেকে পরিত্যক্ত ভবনের মতোই মনে হয়। গিয়ে দেখা যায়, ফটক তালাবদ্ধ। ভেতরে এক লোককে মোবাইলে ব্যস্ত দেখা গেল। কাছে ডেকে বাড়ির দারোয়ান কি না, জানতে চাইলে তিনি নিজেকে গাড়ির ড্রাইভার পরিচয় দেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন বের হয়ে আসেন। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে।

তারা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে বাড়িতে নওফেলের পরিবারের কেউ থাকেন না। তারা কোথায় আছেন, তা তারা জানেন না। বাড়িতে এখন নওফেলের পারিবারিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা থাকেন।

তারা বলেন, আন্দোলনের সময় বাড়ির ফটক, ভেতরে থাকা দুটি গাড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকে নেতাকর্মীরা আর আসেন না।

জাবেদের আলিশান বাড়িতে থাকেন কর্মচারীরা: নগরীর সার্সন রোডে বিশাল জায়গাজুড়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিলাসবহুল বাড়ি। এ বাড়িতে থাকতেন জাবেদের পরিবারের সদস্যরা। একসময় সারা দিন বাড়িজুড়ে নেতাকর্মীর ঢল নামত। দলীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহরের কারণে যানজট লেগে যেত সার্সন রোডে। তবে এখন সেই বাড়িতে থাকেন শুধু কর্মচারীরা। গত বছর ৫ আগস্টের পর পরিবারের আর কেউ থাকেন না। এখন ১০ থেকে ১২ জন কর্মচারী বাড়িটি দেখাশোনা করেন। নগরীর অন্যান্য প্রভাবশালী আওয়ামী নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও এ বাড়িতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন এসে শুধু খোঁজখবর নিয়েছেন বলে জানান তারা।

গত সোমবার বিকেলে সাবেক এই ভূমিমন্ত্রীর বাড়ির ফটকে গিয়েই আটকে যেতে হলো। তালাবদ্ধ ফটকের পাশে থাকা নিরাপত্তারক্ষী হাসমত আলী জানালেন, ভেতরে কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এখানে জাবেদের পরিবারের কেউ থাকেন না। বাড়িটিতে এখন দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ১০ থেকে ১২ জন কর্মচারী থাকেন।