
নিউজ ডেস্ক :: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতার কক্সবাজার সফরে যাওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে বহন করা ঐতিহাসিক এই দিনে ঢাকার বাইরে অবস্থান করা এবং এনসিপিকে নিয়ে নেতিবাচক বিষয় চাউর হওয়ায় দলের অভ্যন্তরেও নেতাদের ঘিরে অস্বস্তি বিরাজ করছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে এই সফরের বিষয়ে কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা দলের রাজনৈতিক পর্ষদকে আগে জানানো হয়নি উল্লেখ করে এসব নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে পাঁচ নেতার কাছে এ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। পাঁচ শীর্ষ নেতা হলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও তার স্বামী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। নোটিশে এ সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ দিবসের ঐতিহাসিক দিনটিতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৪৩৩ ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এনসিপির নেতারা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। কেউ কেউ দাবি করেন, ওই শীর্ষ নেতারা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বৈঠক করতে গেছেন। এ খবরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই হোটেলের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন। তবে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের খবরের কোনো সত্যতা মেলেনি।
দলের যুগ্ম সদস্য সচিব আরশাদুল হক মনে করেন, তারা ঘুরতে যেতে পারেন, এতে কোনো বাধা নেই; কিন্তু মোরাল গ্রাউন্ড দেখলে এটি উচিত হয়নি। জনগণ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের ব্যাখ্যা শুনেছি, তারা ঘুরতে গেছেন। তার পরও আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাই, তারা কেন গিয়েছেন। সেজন্যই দলের পক্ষ থেকে শোকজ দেওয়া হয়েছে।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কালবেলাকে বলেন, তারা ঘুরতে যেতেই পারেন; কিন্তু প্রেক্ষাপটটা গুরুত্বপূর্ণ। গণঅভ্যুত্থানের বিশেষ দিন হওয়ায় জনগণের কাছে নেগেটিভ মেসেজ পোঁছেছে। এনসিপিতে কেউ প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। তাই দলের পক্ষ থেকে শীর্ষস্থানীয় এই নেতাদের শোকজ নোটিশ দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
কালবেলার কক্সবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কক্সবাজারে অবস্থানকারী এনসিপির পাঁচ শীর্ষ নেতা কক্সবাজার ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে একটি ভিআইপি সাদা রঙের গাড়িতে তারা হোটেল সি পার্ল ত্যাগ করেছেন। পরক্ষণে কক্সবাজারের কলাতলীর শালিক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেয়েছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় সাগরসৈকত সংলগ্ন হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজে অবস্থান নেন। তবে তারা সড়কপথে না আকাশপথে কক্সবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এনসিপি নেতাদের বহনকারী গাড়িচালক নুরুল আমিন জানান, তার গাড়িতে করে হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ দুজন নারী (একজন সারজিস আলমের স্ত্রী এবং অন্যজন সমন্বয়ক তাসনিম জারা) হোটেল সি পার্লে যান। তার গাড়িটি পূর্ব নির্ধারিত ভাড়া করা নয়। বিমান থেকে নেমে ওই গাড়ি করে সরাসরি হোটেলে চলে যান তারা।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইনানীর সি পার্ল বিচ রিসোর্ট (রয়েল টিউলিপ) এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন ৫ আগস্ট থেকে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার দুপুর দেড়টার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হোটেল সি পার্ল এলাকা ত্যাগ করেন।
এদিকে অন্য একটি সূত্র বলছে, পাঁচ নেতা সড়ক পথে মহেশখালীর মাতারবাড়ীও যেতে পারেন।