
জুবায়ের হোসেন ॥ অব্যবস্থাপনা আর ধীর গতির এলামেলো সংস্কার কাজের কারনে বরিশাল স্টেডিয়ামে বিপিএল এর আসর হচ্ছেনা এবারও। বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের আশ্বাসে বরিশালবাসীর মনে আশার সঞ্চার হলেও তা পুরোই ভেস্তে গেছে। ইতি মধ্যেই বিপিএল ২০২৫-২০২৬ এর আসরের দিনক্ষন, ম্যাচ সিডিউল এবং ভেন্যু নির্ধারন হয়ে গেছে যেখানে নেই বরিশালের কবি জীবনানন্দ দাশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম। আসন্ন বিপিএল আসর প্রধানত অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং চট্রগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে। প্রাথমিকভাবে এই এই ভেন্যু ঘোষনার পর রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় ভেন্যু হওয়ার জোর গুঞ্জন ওঠে। বিপিএল এর চেয়ারম্যান মাহাবুব আনাম এর পরে কমপক্ষে একটি ভেন্যু বাড়ানোর কথা জানান। তার ঘোষনার পর গত মাসের ৩০ তারিখ বরিশালের কবি জীবনানন্দ দাশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ পরিদর্শনে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের টেকনিক্যাল টিম। কিন্তু পরিদর্শনে এসে কাজের অগ্রগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে চলে যান। এর পরে ভেন্যুর সম্ভাব্য তালিকা থেকেও বাদ পরে বরিশাল স্টেডিয়াম এবং ভেন্যু হিসেবে নিশ্চিত হয় রাজশাহী ও খুলনার দুই স্টেডিয়াম। বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের আশা বরিশালে একটি আন্তর্জাতিক মানের খেলার আসর জমবে। তবে এবারও তা না হওয়ায় ক্ষোভ আর হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষায় এত ভালো মানের একটি স্টেডিয়াম থাকা সত্বেও এখানে শুধুমাত্র দুর্নীতি অব্যাবস্থাপনার কারনে স্টেডিয়ামটি মুল্যহীন হয়ে আছে। প্রায় ৫ বছর ধরে সংস্কার করেও শেষ হয়নি স্টেডিয়ামটির উন্নয়ন কাজের। বছরের পর বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে ক্রিকেট এর লীগ। হতাশা প্রকাশ করে বরিশালের একাধিক ক্রীড়া প্রেমিরা বলেন, “ফুটবলের এই শহরে আসলেই ক্রিকেটের উন্নয়ন এই জনমে আর হবেনা।” আন্তর্জাতিক আসর সাজানো তো দুরের কথা বর্তমান অবস্থা চলমান থাকলে কিছুদিন পর নিয়মিত খেলাধুলাও বন্ধ হবে বরিশালে। বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে ঢেলে না সাজালে বরিশালের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া অঙ্গনের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অন্ধকার।
গতকাল সরজমিনে কবি জীবনানন্দ দাশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেছে, সংস্কার কাজের ভীষন এলামেলো অবস্থা। প্রত্যেকটি পর্যায়ের কাজ শুরু করে তা আংশিক অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। খেলার জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ প্রস্তুতে গুরুত্ব না দিয়ে তৈরি করে রাখা হয়েছে গ্যালারীর চেয়ার। অন্যদিকে কয়েক দফার পরে আবারো পুরো মাঠের মাটি খুড়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এত বড় একটি উন্নয়ন কাজে শ্রমিক খুজে পাওয়া যায়নি দীর্ঘ সময় খোজার পরেও। প্যাভেলিয়ন ভবনের ও মিডিয়া ব্লকের ৫০ শতাংশ শেষের দাবি করা হলেও এখনও সময়সাপেক্ষ।
ফ্লাড লাইট অনেক আগে লাগানো হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় তা অকেজো হয়ে গেছে। এর কাজ শেষ হতে ৫/৬ মাস লাগবে এখনও। সাবস্টেশন, ট্রান্সফরমার বসানো, ইলেকট্রিক ওয়্যার বসানোসহ বিভিন্ন কাজের মধ্যে কিছু কাজ শেষ হয়েছে, কিছু শেষের পথে। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন মাঠের কাজের অবস্থা বেশি শোচনীয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিলেটের মতো এখানকার মাঠেও উন্নতমানের ঘাস লাগানো এবং আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কথা থাকলেও তা কবে হবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কাউকেই সংস্কার কাজের আশে পাশে পাওয়া যায়নি। তবে স্টেডিয়ামে অনুশীলনে আসা খেলোয়াররা জানান, কাজের যে অবস্থা তারা প্রতিনিয়ত দেখছেন তাতে ৬ মাস তো দুরের কথা এক বছরেও এই কাজ শেষ হবেনা। নিয়মিত ও জোরসোরে সব কাজ হলে শেষ করা সম্ভব ছিল। তবে অনিয়মিতভাবে এসব কাজ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। আজ চলে তো কাল বন্ধ। তাই বিপিএল তো দুরের কথা আগামী দুই এক বছরে স্থানিয় কোন খেলাও এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা মনে করেন নাহ।
এ বিষয়ে আলাপকালে বরিশাল বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান খসরু বলেন, বিপিএল এর আসর জমা বা বরিশালে আন্তর্জাতিক মানের একটি খেলার আসরের আয়োজন হওয়ার স্বপ্ন ভাঙ্গার পেছনের প্রধান কারন অনির্বাচিত ও অভিভাবকহীন জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার একটি নির্বাচিত কমিটি থাকলে কখনই এমন পরিস্থিতি হতোনা। দীর্ঘদিন ধরে স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলছে যা অত্যন্ত নি¤œমানের। কাজের শুরুতেই বার বার জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে তারা কাজের মান নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে কোন লাভ হয়নি বলে জানান। বর্তমানে একটি ৩ সদস্যের এডহক কমিটি দিয়ে চলছে ক্রীড়া সংস্থা। কোন বিষয় তদারকি করার মত লোক নেই বরিশাল স্টেডিয়ামে। ১৯৯৫ সালের পর আর কোন নির্বাচন হয়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থার। একটি সংগঠন পরিচালনের জন্য সর্বজন গৃহীত যোগ্য একটি পরিচালনা পর্ষদ না থাকলে তার জীর্নদশা হবে এটাই স্বাভাবিক। ২০০৬ সালে ফ্লাড লাইট সহ যে মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছিল তাও যদি থাকতো তাতেও বিপিএল এর ভেন্যু করা যেত। কিন্তু উন্নয়নের নামে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তাতে আর কিছুই সম্ভব না। অযোগ্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার কারনে আজ এত উন্নত মানের স্টেডিয়ামটি একটি বেওয়ারিশ স্টেডিয়ামে পরিনত হয়েছে বলে ক্ষোভ জানান আসাদুজ্জামান খসরু।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে বরিশাল নগরীর বান্দ রোড লাগোয়া কীর্তনখোলা নদীর তীরে ২৯ একর ১৫ শতক জমির ওপর স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি আধুনিকায়ন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক আসর হিসেবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের চার দিনের ম্যাচ আয়োজনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।