
নিজস্ব প্রতিবেদক :: হামলাকারীদের গ্রেফতার ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টা পর কর্মস্থলে ফিরলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা, আগামীকাল থেকে ক্লাসে ফিরবেন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা।
৪৮ ঘণ্টা পর আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩ টায় নিজ নিজ কর্মস্থলে রোগী সেবায় ফিরেছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. মো. নাজমুল হুদা। এছাড়া আগামীকাল থেকে ক্লাসে ফিরছেন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও কলেজ শিক্ষার্থীদের কর্মস্থল এবং ক্লাসে ফিরতে অনুরোধ জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর। পরিচালকের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিকেল ৩টায় কর্মে যোগদান করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে কতিপয় সন্ত্রাসী আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ এমনকি আমাদের মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করছে। রাস্তায় শিক্ষার্থীরা বেড় হলে তাঁদের গালিগালাজ ও ধাওয়া করা হয়। আমরা আমাদের নিরাপত্তার দাবিতে সোমবার সকাল ৮টার পর থেকে ক্লাস বর্জন করি। অতঃপর আজ মঙ্গলবার হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর স্যার ও আমাদের উপাধ্যক্ষ ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু স্যার আমাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাদের নির্দেশ ও আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা আগামীকাল বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরবো।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, পরিচালক স্যারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা বিকেল ৩ টায় কর্মস্থলে ফিরেছি। ১৭ আগস্ট স্বাস্থ্য সংস্কারের আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায় স্যারের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এরই প্রেক্ষিতে আমরা ওই দিন বিকেল ৩ টা থেকে কর্মবিরতিতে যাই। কিন্তু পরিচালক স্যারের অনুরোধ ও রোগীদের কথা বিবেচনা করে আমরা হাসপাতালে জরুরি সেবা চালু রাখি। পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই। তাদের গ্রেফতার করা না হলে আমরা কমপ্লিট শাটডাউনে যাবো বলে দাবি জানাই। আজ দুপুর ১২ টার পর পুলিশ হামলাকারী একজনকে গ্রেফতার করছে বলে আমাদের নিশ্চিত করা হয়। আমাদের বাকী দাবি গুলো বিষয়ে পরিচালক স্যার গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে পুনরায় কাজে ফিরেছি।
সিনিয়র ও মিড লেভেলের সকল চিকিৎসকসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালে রোগী সেবা দিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত।
হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে। তার ইতোমধ্যে কাজে যোগদান করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার’র সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন ওই চিকিৎসককের উপর হামলা ও আন্দোলনের সাথে জড়িত হামলাকারী ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার অভিযান চলছে। এছাড়া নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করছেন এবং করবেন বলে জানান পুলিশ কমিশনার।
……………………………
হামলাকারীদের গ্রেফতার ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশের দাবিতে
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষার্থী ও স্টাফদের মানববন্ধন
বরিশাল
স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ও হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্টাফদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং নিরাপদ কর্ম পরিবেশের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টায় হাসপাতালের সামনে বান্দ রোডে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষার্থী ও স্টাফরা মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে অংশ গ্রহকারীরা ‘হাসপাতালে হামলাকারীদের গ্রেফতার, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃস্টি, স্বাস্থ্য সংস্কারের নামে নৈরাজ্য প্রতিহত করা, সেবা কেন্দ্রে সন্ত্রাসী না করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, কতিপয় শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ এবং মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করছে। তাদের এই হামলার কারণে আমরা নিরাপত্তাহীন । আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই।
মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি আমাদের সকলের। আমরা চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রায় হামলার শিকার হই। তাই আমাদের কর্মস্থল নিরাপদ থাকতে হবে।
মানববন্ধন চলাকালে সাংবাদিকদের মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, গত ১৭ আগস্ট মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী হাসপাতালের প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের হুমকি দেয়। ওই দিন আমাদের মেডিসিন ইউনিট-২ এর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলিপ রায়কে বেদম মারধর করে। চিকিৎসকের উপর এমন নির্যাতন ও হাসপাতালের সামনে তারা অবস্থান নেয়ায় রোগীরা যেমনি ভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তেমনি আমাদের চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তাই আমরা মহিউদ্দিন রনি ও দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।
মানববন্ধনে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মুনায়েম সাদ বলেন, স্বাস্থ্য সংস্কারের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু ওরা স্বাস্থ্য সংস্কারের নামে আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের প্রতিপক্ষ মনে করে প্রতিদিনই হামলা চালাচ্ছে। আমরা সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি বলেন, মাত্র ১ হাজার শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন ইনডোরে ভর্তি থাকেন ৩ হাজার রোগী। তাদের সেবা দিতে আমাদের স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসককে হিমশিম খেতে হয়। তার উপর বহিরাগতদের হামলায় আমরা আহত হয়েছি। এ অবস্থার পরিত্রাণ চাই আমরা। আমরা কোন ধর্মঘট চাই না, শুধু নিরাপদ পরিবেশে রোগীদের সেবা দিতে চাই।
মানববন্ধন শেষে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফ এবং মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বান্দ রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।