
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ১৩২ বস্তা সরকারি চাল জব্দ।
রাজশাহীর দুর্গাপুর খাদ্য গুদামে ভালো চালের সঙ্গে নিম্নমানের চাল মিশিয়ে বিতরণ করা হচ্ছিল খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগী হতদরিদ্রদের মাঝে।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার উপকারভোগীর মাঝে এসব নিম্নমানের চাল বিতরণ শুরু করা হয়েছিল আগস্টেরর শেষ দিকে। অভিযোগ পাওয়ার পর দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন খাদ্য গুদামে অভিযান চালিয়ে ১৩২ বস্তা নিম্নমানের চাল জব্দ করেছেন।
পাশাপাশি গুদামের এসব মানহীন চাল বিতরণ বন্ধ করে ভালো চাল বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন। নিম্নমানের এসব চাল কীভাবে সরকারি খাদ্য গুদামে ঢুকেছে তা খুঁজে বের করতে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
এদিকে সরকারি খাদ্য গুদামে নিম্নমানের চাল কীভাবে ঢুকল তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গাপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) রফিকুল ইসলামকে শোকজ করেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি-ফুড)।
দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ইউসিএফ) ইয়াছিন আলী সরকারি খাদ্য গুদামে এসব নিম্নমানের চাল কীভাবে ঢুকল তা জানেন না বলে তদন্ত কমিটিকে বলেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন নিম্নমানের এসব চাল গুদামে কীভাবে এলো তা তিনি জানেন না। ভাল বলতে পারবেন গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাওয়ার অনুপযোগী নিম্নমানের চালের উৎস্য অনুসন্ধান ও এসব চাল সরকারি গুদামে ঢুকানোর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে ২৮ আগস্ট গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসকে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আল মামুন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম শামীম আহাম্মেদ। তারা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেছি। কীভাবে এসব নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকল তার নথিপত্র চেয়েছি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে। নথিপত্র পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে কারা এই নিম্নমানের চাল কোথা থেকে এনে গুদামে ঢুকিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে গুদামে থাকা খাওয়ার অনুপযোগী নিম্নমানের চালের বিষয়ে মুখ খুলছেন না গুদামের ভারপ্রাপ্ত (ওসি-এলএসডি) কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি স্বীকার করেন নিম্নমানের চাল জব্দের ঘটনায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ইতোমধ্যে তাকে শোকজ করেছেন। তিনি তার জবাব দেবেন। নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপজেলার সাত ইউনিয়নের উপকারভোগীদের মাঝে চাল বিতরণের সময় তার কাছে অভিযোগ আসে।
২৬ আগস্ট আমি গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে খাওয়ার অনুপযোগী বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের চাল দেখতে পেয়েছি। ইতোমধ্যে ১৩২ বস্তা নিম্নমানের চাল জব্দ করে ভাল চাল থেকে আলাদা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যারাই এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে নিম্নমানের চালের বিষয়ে খাদ্য বিভাগেরই একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে কেনা বিপুল পরিমাণ চাল বগুড়ার সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার (সিএসডি) ও রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ খাদ্য গুদামে (এলএসডি) পড়ে থেকে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এসব চাল সম্প্রতি শুধু দুর্গাপুর খাদ্য গুদামেই নয় রাজশাহীর অন্য এলএসডিগুলোতেও পাঠানো হয়েছে। এসব চাল কৌশলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। তবে নিম্নমানের চালের বিষয়টি উপকার ভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বিতরণ বন্ধ করেছেন দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।