ঢাকাশুক্রবার , ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগের হাসপাতালের মেয়াদ দুই দফা বেড়েও শেষ হয়নি কাজ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫ ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণব্যয় দুই দফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। নির্মাণ সম্পন্ন করতে আরও দুই বছর সময় চেয়ে গণপূর্তের কাছে আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্ধিত এই সময়ের মধ্যেও হাসপাতালটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগের জন্য ৪৬০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী শেবাচিম হাসপাতালের সামনে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ১৪ হাজার বর্গফুটের ১৭ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। মেসার্স খান বিল্ডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।বরিশাল বিভাগের ভ্রমণ

কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির কারণে ২০২৩ সালে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ওই সময়ের মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি বিশেষায়িত হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় বাড়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। ফলে তৃতীয় দফায় আরও দুই বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে।

গণপূর্ত দপ্তর জানায়, শেবাচিম হাসপাতালের বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল প্রকল্পের ডিপিপি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৯৯ কোটি ৫১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে বেজমেন্টসহ ১৫ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। দুই দফায় প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি করায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপক রিপন তালুকদার বলছেন, বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু আমরা কাজের বিল পুরো পাইনি। বিল না পেলে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তার পরও কমসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি আমদানি জটিলতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়েনি। অবকাঠামোর নির্মাণকাজ এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হতে এখনো দুই বছর সময় লাগবে। তাই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরই নতুন করে দুই বছর সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন হয়নি। তবে শিগগিরই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করাও সম্ভব হবে।বরিশাল বিভাগের ভ্রমণ

শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা জায়, শেবাচিম হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে ২৭ শয্যার ক্যানসার ওয়ার্ড রয়েছে। জেলা ও উপজেলাগুলোতে ক্যানসারের কোনো চিকিৎসাসেবা না থাকায় শেবাচিম হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত এক বছরে ক্যানসারে আক্রান্ত ৪ হাজার ৮০১ জন এখানেই চিকিৎসা নিয়েছেন।

রেডিওথেরাপি বিভাগের মেডিকেল অফিসার মো. মহসীন হাওলাদার বলেন, আশপাশের জেলা থেকে রোগীরা এখানে চলে আসেন। যদি জেলা পর্যায়ে কিছু চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো, রোগীদের ভোগান্তিও কমে যেত।

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বরিশালে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। তবে নানা জটিলতার কারণে ঠিকাদার নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি। তৃতীয় দফায় আরও দুই বছরের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী- বর্ধিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শুধু অবকাঠামো দেখলেই হবে না। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন, ইলেকট্রিক ফিটিংস, লিফট, এসকেলেটর, ফ্লোর টাইলস, বিদ্যুতের জন্য সাবস্টেশন স্থাপন, সেন্ট্রাল অক্সিজেনেরসহ অনেক কাজ বাকি রয়েছে

বরিশাল জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক রফিকুল আলম বলেন, এ অঞ্চলের চিকিৎসাব্যবস্থা সহজ ও যুগোপযোগী করে তুলতে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। এটা থমকে গেলে আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে।বরিশাল বিভাগের ভ্রমণ