ঢাকাশনিবার , ২৫ অক্টোবর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও আদালতে হত্যা মামলায় চার্জশিট দিলেন গলাচিপা থানার এসআই, সোহেল রানা 

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
অক্টোবর ২৫, ২০২৫ ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

রবিউল ইসলাম রবি :: পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন না থাকা সহ শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকার মধ্যে আমেনা বেগম (৬৫) এর মৃত্যু হয়েছে। আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত ছিল আমেনা। একই বংশের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধের সময় তর্ক বিতর্কের মধ্যে হঠাৎ আমেনার মৃত্যু হলে, পটুয়াখালী গলাচিপা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলে আসামিদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েও আদালতে চাজশির্ট দাখিল করেছেন। তবে চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদি আদালতে নারাজি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পুরো ঘটনার কলকাঠি নাড়ছেন একই বংশের রিয়াজ ঘড়ামি। এসব ঘটনা চলাকালে সময় রিয়াজ ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ, বাড়ির বড়ো বড়ো গাছ বিক্রি করে প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। যেখানে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর সরেজমিন পরিদর্শনকালে পাওয়া যায় নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

মুসা নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে গলাচিপা থানায় বসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছে। যা মুসা প্রায় অর্ধশত মানুষের উপস্থিতিতে এক ভিডিও বক্তব্যেতে ৪ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের বিষয় তুলে ধরেন। এদিকে চলতি বছরের ১৬ মার্চ আমেনা বেগমের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যার স্মারক নং- (পমেকহা/পটুয়া/২০২৫/৭১)। সেই প্রতিবেদনে লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুর রহমান বলেন, গলাচিপায় দ্বন্দ্ব হয় ৭০% জমি, ২০% নারী এবং বাকি ১০ % অন্যান্য (মাদক ও রাজনীতি) ঘটনায় মামলা হয়। সুরতহাল সহ ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আমেনার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ঘুষ নেয়ার বিষয়ে কেউ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপর এক সূত্র বলছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা, ওসি ও সার্কেল এসপি ঘুষের ভাগ নিয়ে একতরফাভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। তাই এমন ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর পটুয়াখালী গলাচিপা উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ছোট চৌদ্দকানি গ্রামে এ ঘটনার দিনই গলাচিপা থানায় মামলা দায়ের হয় এবং ২০২৫ সালের ৩০ মে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা। তিনি ঘটনার মধ্যের ঘটনা তদন্ত না করে বাদীর দায়েরকৃত মামলার বর্ণনার ভিত্তিতে হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। মূলত মৃত আমেনা বেগমের ছেলে-মেয়েদের সাথে যে ৬ শতাংশ জমি নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে দ্বন্দ্ব চলছে। সেই জমির মালিক নাজমাকে সহ তার বাবা, চাচাতো ভাই-বোনদের হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনার মূল রহস্য বাদ পড়ছে এমন তথ্যে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা বলেন, গভীরে তদন্ত করিনি। ৪ লাখ ঘুষ নেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, মামলা তদন্ত করতে গেলে নানা মানুষ কথা বলে। আমি বরিশাল আসবো, আপনার সাথে অবশ্যই দেখা করবো। চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেন- নশু ঘড়ামি (৬০), আমিনুল ইসলাম মুন্সি (৫০), রিপন ঘড়ামি (৩৩), জাহাঙ্গীর ঘরামী (৫৬) ও নাজমা বেগম (৪৬)।

আর দায়েরকৃত মামলার আসামিরা ছিলেন- আসামিরা হলেন- মোঃ নশু ঘড়ামি (৬০), মোঃ আমিনুর মুন্সি (৫০), মোঃ রিপন ঘড়ামি (৩২), মোঃ জাহাঙ্গীর ঘড়ামি (৫৫), মোঃ শানু ঘড়ামি (৬৫), মোঃ আনোয়ার মুন্সি (৬০), মোঃ মাসুম ঘড়ামি (২৫), মোসাঃ নাজমা বেগম (৪৫)সহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জন। মামলার পর ঘর-বাড়ি, গাছপালা, পুকুরের মাছ লুটপাটের ঘটনা। দুইদিন পর ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মামলার ২ নং আসামি মোঃ আমিনুর মুন্সিকে।

চার্জশিটে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন আসামিরা বাদীপক্ষের লোকজনকে দড়ি দিয়া গাছের সাথে বেধে এলোপাতাড়ি মারধর করে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। আসামি মোঃ নশু ঘড়ামি তার স্ত্রী আমিনা বেগমকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে বুকে ঘুষি মারলে তিনি মাটিতে পড়ে যায়। আসামি মোঃ আমিনুর মুন্সি আমিনা বেগমের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার তলপেটে লাথি মারলে, আমিনা বেগম বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে। কিন্তু সুরতহাল সহ ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ছোটো চৌদ্দকানি গ্রামের মৃত আ. মজিদ ঘড়ামির ২ সংসারে ৭ ছেলে ও ২ মেয়ে। ১ম সংসারে কালা মিয়া ঘরামি (৮২), মৃত চান মিয়া, মৃত ধলা মিয়া, সানু ঘরামি, নশু ঘড়ামি, মৃত আনোয়ারা বেগম ও মৃত ছকিনা বেগম। ২য় সংসারে মৃত আবুল ঘড়ামি ও মৃত আশরাফ ঘড়ামি। প্রত্যেকের সংসারে সন্তান রয়েছে।

এরমধ্যে মৃত ধলা মিয়ার প্রথম স্ত্রীর আমেনার সংসারে ৩ ছেলে ১ মেয়ে এরা হলেন- শামিম ঘড়ামি, ফিরোজ ঘড়ামি, শাহিন ঘড়ামি ও লাখি বেগম। ধলা মিয়ার ২য় স্ত্রীর মনোয়ারা বেগমের সংসারে ২ ছেলে ১ মেয়ে। কুদ্দুস ঘড়ামি, সাইফুল ঘড়ামি ও রোজিনা বেগম। তার সম্পত্তি বিক্রি করেছে বলে জানা যায়।

এদিকে ধলা মিয়া মৃত্যুর পর আমেনা বেগম বিয়ে করে দেবর নশু ঘড়ামিকে। এ সংসারে নেই কোনো সন্তান। এই নশু হলেন মৃত ধলা মিয়ার ছোট ভাই। অন্যদিকে নশু ঘড়ামির প্রথম সংসারের স্ত্রী হলেন রহিমজান বিবি। এই সংসারে রয়েছেন ২ ছেলে ৩ মেয়ে। তারা হলেন- রিপন ঘড়ামি, হাসান ঘড়ামি, নাজমা বেগম, রেসমা বেগম এ আপসা বেগম।

নাজমার বিয়ে হয় তার মৃত চাচা আশরাফ ঘড়ামির ছেলে সাগর হোসেন ফরিদ ঘড়ামির সাথে। ফরিদ মুত্যুর পর নশু ঘড়ামি তার মেয়ে নাজমাকে মানবিক বিবেচনায় ৬ শতাংশ জমি দলিল করে দেয়। অপরদিকে নাজমার ভাশুর হলেন রিয়াজ ঘড়ামি। ফরিদ মৃত্যুর পর ভাইয়ের সম্পত্তি এবং ভাবি নাজমা ও তার বাবা নশু ঘড়ামির সম্পত্তি কূট কৌশলে দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে আশরাফ ঘড়ামির বড় ছেলে রিয়াজ ঘড়ামি। আ.লীগ শাসনামলে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। বাপ-দাদার সম্পত্তি এককভাবে দখলে নিতে চান। যা পাবে তার চেয়ে নিয়েছে ১০ গুণ জমি বেশি। হত্যার মামলার তদন্তে ফেঁসে যাবার পূর্বেই রিয়াজ চলে যায় বিদেশে।

এই রিয়াজ ঘড়ামি কূট কৌশলে মৃত ধলা মিয়া ও নশু ঘড়ামির সন্তানদের মধ্যে সাপ-বেজি লড়াই শুরু করে দিয়েছে। যার নেপথ্যে রিয়াজ অর্থের বিনিময় পুলিশ প্রশাসন ম্যানেজ করে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে রিয়াজ বিদেশ বসে অর্থের শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে আর তারা চাচাতো ফুফাতে ভাইয়েরা লড়াই করছে।

দুই আসামির বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সোহেল রানা মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। থানার সামনে বসে মুসার মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়। উলটো আমাদের বিরুদ্ধে ভুয়া চার্জশিট প্রদান করেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি উঠে আসলেও বিনা অপরাধে আমি ও আমার মামা ১০ মাস ১৭ দিন কারাবাস করেছি। আমি/আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।