ঢাকারবিবার , ২১ জানুয়ারি ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাড়তে পারে লোডশেডিং

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জানুয়ারি ২১, ২০২৪ ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাড়তে পারে লোডশেডিং

গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং হতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার এ কথা জানানো হয়।

গতকাল দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে বলা হয়, মহেশখালী এলএনজি এফএসআরইউর কারিগরি ত্রুটির কারণে এলএনজি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অতি দ্রুত সমাধানে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে দেশের কিছু কিছু এলাকায় খুবই স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে ১৬টি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন একেবারেই বন্ধ আছে। এ ছাড়া গ্যাসভিত্তিক অন্য কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গতকাল শনিবার এ খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৫৬২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট।

এদিকে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত নভেম্বরে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে যায়। পরে ১৭ জানুয়ারি রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ফিরে এলেও কারিগরি ত্রুটির জন্য সময়মতো তা চালু করা যায়নি। পাশাপাশি সামিটের এলএনজি টার্মিনালটিতেও সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে গত শুক্রবার দেশের পূর্বাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ ছয় জেলায় গ্যাস সরবরাহে গুরুতর বিপর্যয় ঘটে।

ওই কর্মকর্তা জানান, এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল চালুর পর দ্বিতীয় টার্মিনালটিও শিগগির রক্ষণাবেক্ষণে যাবে। দ্বিতীয় টার্মিনালটির মালিকানায় রয়েছে সামিট। এটি রক্ষণাবেক্ষণে গেলে মার্চের আগে ঠিক হবে না। টার্মিনাল দুটি থেকে দৈনিক সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেত।

জানা গেছে, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বছরজুড়েই থাকবে গ্যাসের সংকট। রেশনিং করে এ সংকট মোকাবিলার চিন্তা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে আমদানি করা এলএনজি থেকে। এ হিসাবে ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি থাকছে। মার্চে দুটি এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহে যোগ হবে। তারপরও ঘাটতি থাকবে ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে মেটানো হয়। বাকি ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। চলতি বছর সরকারের আমদানির পরিকল্পনায় রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার এবং ওমান থেকে ৫৬ কার্গো এলএনজি আমদানি। এর মধ্যে কাতার থেকে আসবে ৪০ কার্গো এবং ওমান থেকে ১৬। এ ছাড়া স্পট মার্কেট থেকে চলতি বছর ২৫ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে সরকার ১৩ কার্গো আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কার্গোপ্রতি এলএনজির ধারণক্ষমতা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট)। বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ এরই মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় বেশ কয়েকটি কোম্পানি এলএনজি সরবরাহে অপারগতা জানিয়েছে। ফলে এসব অনিশ্চয়তার কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।এ ছাড়া দেশের গ্যাস সংকটের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থা নীতিনির্ধারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তারা বলছেন, স্পট মার্কেট থেকে যে এলএনজি কেনা হয়, এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকা অন্যতম। এসব দেশ থেকে এলএনজি আসে লোহিত সাগর হয়ে। তবে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতিরা পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের পণ্য বা জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। যে কারণে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এ অবস্থায় স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশের এলএনজি কেনা অনেক ব্যয়বহুল হবে। আর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে না পারলে দেশে গ্যাসের সংকট নিশ্চিতভাবে হবে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিকল্প চিন্তাও করা হচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, আপাতত গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উপায় না থাকলেও সংকট সমাধানে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খনন ও সংস্কারের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে সফল হলে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। এরই মধ্যে কয়েকটি কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে তা পরিমাণে কম। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের হাতে থাকা বিবিয়ানায় নতুন গ্যাসের মজুত পাওয়া গেছে। সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে এ গ্যাস উত্তোলন চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগে শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কূপ খনন ও সংস্কার করে কাঙ্ক্ষিত গ্যাস পাওয়া যাবে কি না, সেটি বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া নতুন করে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করতে যে বিপুল পরিমাণ ডলার দরকার, তা জোগাড় করা না গেলে আমদানি ব্যাহত হবে। এ সময়ে দেশে পুরোনো কূপে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি চাহিদাও বেড়ে যেতে পারে। ফলে চলমান সংকট কতটা দূর হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি বছরের পুরো সময়টাই গ্রাহকের গ্যাস সংকটের মধ্য দিয়েই কাটাতে হবে।