রবিউল ইসলাম :: উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীরা মাস্টার প্লানের মধ্যে নিজেকে জয়ী করবে ,অনুসন্ধানী পর্যালোচনার বিশ্লেষণ
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর অবস্থান:
বিএনপির ভোটে শক্তিশালী অবস্থানে-মোটরসাইকেল
লভিং তদবির ও কর্মী সুপারিশে এগিয়ে-আনারস
আ.লীগের ভোটের উপর নির্ভরশীল-দোয়াত কলম
কম-বেশি সবখানে ভোট ছড়িয়ে রয়েছে-ঘোড়া
এস.আর সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্যই ভরসা-কাপ পিরিচ
ভাইস চেয়ারম্যান ৪ প্রার্থীর মধ্যে
হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে তালা ও বই মার্কা প্রার্থী
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৩ প্রার্থীর মধ্যে
দুই জাঁ এর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফাঁকা মাঠে কলস
রবিউল ইসলাম রবি ॥ বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচনে ৩টি পদে অংশ নেয়া এক ডজন প্রার্থী ১০ ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, স্থানীয় আ.লীগ ও বিএনপি অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে নির্বাচনী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। উপজেলার ১৪৭টি গ্রামের জনগনের কাছে সিংহভাগ প্রার্থীর অবস্থান স্বর্ণলতা ও পরগাছা। অধিকাংশ প্রার্থী শর্তানুযায়ী ৬৮ ভোটকেন্দ্রে তার মার্কার জয় অর্জনে স্ব স্ব এলাকার দুই-চার জনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ সব দায়িত্বশীলরা নানা কূটকৌশলের পাশাপাশি ‘মাস্টার প্লান’ সাজিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। ইউনিয়ন পর্যায় দৈনিক আজকের সময়ের বার্তার অনুসন্ধানী পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে নানা তথ্য।
বরিশাল জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ এর প্রথম ধাপ। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এ উপজেলায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৯৯ ভোটার রয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে প্রতিটি পদক্ষেপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়েছে মোটরসাইকেল মার্কা প্রার্থী এস এম জাকির হোসেন ও আনারস মার্কা প্রার্থী মাহমুদুল হক খান মামুন সমর্থকদের মধ্যে। এ দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হামলা-মামলাও হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় কিছু সংখ্যক আ.লীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির প্রায় সব নেতা-কর্মী মোটরসাইকেল প্রার্থীর অনুকূলে। এলাকা ভিক্তিক গ্রুপ (মেম্বর, আ.লীগ. বিএনপি, মুরুব্বী, ইয়ং ব্যাচ) আকারে ভোটার সাজিয়েছে মোটরসাইকেল প্রার্থী। অপরদিকে পিছিয়ে নেই আনারস মার্কা প্রার্থীও। ইউনিয়ন পর্যায় তার পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সাংসদ ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীম সমর্থিত অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের। তবে মাঠ পর্যায় এ প্রার্থীর সমালোচনা রয়েছে কোন নেতা-কর্মী মোবাইলে রিং দিলে ধরেন না তিনি। যে মানুষের কল ধরে না সে জনসেবা করবে কিভাবে? উপরোক্ত দুই প্রার্থী নির্বাচন সম্পন্ন করতে অর্থ ব্যয় করছে সমানতালে। তাই এ দুই প্রার্থী নির্বাচনে আলোচনার পাত্র হয়ে উঠেছে।
নির্বাচনী মাঠে ঠান্ডা অবস্থানে রয়েছে ঘোড়া মার্কা প্রার্থী মো. মাহবুবুর রহমান (মধু) ও দোয়াত কলম মার্কা মো. মনিরুল ইসলাম (ছবি)। ঘোড়া মার্কা প্রার্থী গত নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধি থাকা অবস্থায় জনগনের সুখে-দুঃখে ঘটনাস্থলে ছুটে যেতেন তিনি। তাই তার ভোট কম-বেশি সব ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে। আর দোয়াত কলম মার্কা প্রার্থী চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তিনি বরিশাল সদর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি। নির্বাচনী মাঠে আ.লীগ নেতা কর্মী ও সমর্থক ভাগ ভাগ হয়ে যাওয়া বিপাকে এ প্রার্থী। বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান রিন্টু ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা: রেহেনা বেগমসহ তাদের সমর্থিত নেতা-কর্মীরা দোয়াত কলম মার্কার সমর্থন করছেন বলে জানা গেছে। এ দুই প্রার্থী ভোট বেশি থাকা ইউনিয়নে টার্গেট করে অগ্রসর হচ্ছে। অপরপ্রার্থী কাপ-পিরিচ মার্কা মো. আব্দুল মালেক এস.আর কল্যাণ সংস্থা থেকে সহযোগিতা পাওয়া ব্যক্তিদের ও সদস্যদের উপর নির্ভরশীল।
রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের রানিং ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন সাবেক চেয়ারম্যানসহ এক ইউপি সদস্য আনারস মার্কার সমর্থক। সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ বাকি বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধরা মোটরসাইকেল মার্কার সমর্থক। ভোট সংখ্যা ১৮,৯৯১। কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হলেন দোয়াত কলম মার্কার সমর্থক। এ ইউপি সদস্যদের মধ্যে লভিং তদবির রয়েছে সমানতালে। ভোট সংখ্যা ১৫,৫৩১। চরবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান দোয়াত কলমের সমর্থক। এ ইউপির প্রথম ৩ ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিসহ ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি মোটসাইকেল সমর্থক। শেষের ৩ ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি আনারসের। কিছুটা রয়েছে কাপ-পিরিচ মার্কার। ভোট সংখ্যা ২১,৭৬৯। শায়েস্তাবাদ ইউপি চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ ইউপি সদস্য হলেন মোটসাইকেল মার্কার সমর্থক। একমাত্র এ ইউনিয়ন থেকে বিএনপির কয়েক নেতাকর্মীসহ ২ জন ইউপি সদস্যর সমর্থন রয়েছে আনারস মার্কায়। ভোট সংখ্যা ২২,৭৩৬। চাঁদপুরা ইউপি আনারস ও দোয়াত কলমের সমর্থক বেশি। তবে এটি আনারস মার্কার ভোট ব্যাংক। ভোট সংখ্যা ১৭,৭১০। চরকাউয়া দোয়াত কলমের ভোট ব্যাংক। তবে অন্য প্রার্থীর তুলনায় কিছু সংখ্যক সমর্থনে মোটরসাইকেল। ভোট সংখ্যা ২৯,৯৮৫। অপরদিকে চরমোনাই (২৮,৭৯৮) ও চন্দ্রমোহন (১২,১৮৫) ইউপি মোটর সাইকেলের ভোট ব্যাংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে চরমোনাই ও জাগুয়া (৭,১৯১) ইউপি চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি। টুঙ্গীবাড়ীয়ার (২০,৪০৩) চেয়ারম্যানসহ ৩ জনপ্রতিনিধি মোটর সাইকেল সমর্থক। জাগুয়ায় সকল প্রার্থীর সমর্থন চলছে সমানতালে।
১০ ইউনিয়নে ভাইস চেয়ারম্যান পদে শক্ত অবস্থানে রয়েছে ২ প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারণার অনিয়ম এনে বই মার্কা প্রার্থী মো: মাহিদুর রহমান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তালা মার্কা প্রার্থী মো: জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে একজন জয়ী হবেন। প্রচার প্রচারণায়ও রয়েছে সমানতালে। অপর দুই প্রার্থী হলেন উড়োজাহাজ মার্কা প্রার্থী শহিদ মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ ও টিউবওয়েল মার্কা প্রার্থী মো: হাদিস মীর।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে প্রচার প্রচারণায়ও এগিয়ে রয়েছে কলস মার্কা প্রার্থী মোসাম্মৎ হালিমা বেগম, ২য় পর্যায় রয়েছে হাঁস মার্কা প্রার্থী নেহার বেগম, ৩য় পর্যায় রয়েছে ফুটবল মার্কা প্রার্থী মারিয়া আক্তার। হাঁস ও ফুটবল মার্কা প্রার্থী সম্পর্কে জাঁ। তাই নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের ভোটই দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। সুযোগে গোল দিবে কলস মার্কা প্রার্থী। তাছাড়া দুই জাঁ এর সকল ভোটকেন্দ্র কর্মী তো দূরের কথা দক্ষ এজেন্ট দেয়ার সামর্থ নেই।
অধিকাংশ প্রার্থী বরিশাল মেট্রোপলিটন (বিএমপি) এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় এর আওতাধীন কোতোয়ালী থানার অর্ন্তভূক্ত ৬নং জাগুয়া ইউনিয়ন, বন্দর থানার অর্ন্তভূক্ত ৭নং চরকাউয়া, ৮নং চাঁদপুরা, ৯নং টুঙ্গিবাড়িয়া ও ১০নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নসহ বিমানবন্দর থানার আওতাভুক্ত ১নং রায়পাশা কড়াপুর ও ২নং কাশীপুর ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন অনেক বাসিন্দা।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে কয়েক এলাকায় দেখা গেছে আনারস,বই ও কলস মার্কা প্রার্থীর সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে নির্বাচনী প্রচারণা করছে। তার আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলছেন এই তিন প্রার্থীই নির্বাচিত হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের একাধিক বিএনপি নেতা ও জনপ্রিতনিধিদের সাথে নির্বাচনী বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে তারা নাম উল্লেখ করে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি নয়। তারা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থকরা ভোট দিবে। আর এ সব ভোটাররা কখনই চিহ্নিত আ.লীগ নেতা প্রার্থীকে ভোট দিবে না। প্রয়োজনে প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ প্রার্থীকে ভোট দিবে। যাতে আ.লীগের ঘরে শত্রুতার দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। আবার অনেকে ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন সিংহভাগ জনগন ভোট কেন্দ্রেই যাবে না। কারণ, দেশের জনগনের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচণের আমেজ আগেই হারিয়ে ফেলেছে। তাই ৪০% মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে। পরে ৫০% + এর উপর ভোট সংখ্যায় রুপান্তিত হবে।
প্রচার প্রচারণা করা কয়েক কর্মী জানিয়েছেন, প্রতিদিন বিকেলে দু’আড়াই ঘন্টা ভোটারদের কাছে গিয়ে হ্যান্ড লিফলেট বিতরণ করে দুই শত টাকা পাই। কাউকে আবার দেড়শ টাকা দেয়া হয়। মানে জনপ্রতি মাথার উপর দিয়ে ৫০ টাকা মেরে দিচ্ছে এবং শর্তসাপেক্ষে ওপেনে ও গোপনে অর্থ লেনদেন হচ্ছে। উল্লেখ্য, আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে বরিশাল জেলার সদর উপজেলায় ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ও পিরোজপুর জেলার ৩ উপজেলাসহ দেশের ১৫০ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় শতাধিক জনগনের সাথে আলোচনাকালে তারা বলেন, একটি মাস্টার প্ল্যান কর্মক্ষেত্রে নেতা কর্মীদের স্মার্ট সম্প্রদায় পরিকল্পনা নির্দেশ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাবে। কেননা, বেশি ভাগ প্রার্থীর সাথে জনগনের পরিচিতি নেই।