স্টাফ রিপোর্টার :: বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চর কাউয়া খেয়া ঘাট দখল নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, বিআইডব্লিউটি (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক শুরু হওয়া উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই ঘাটটি দখল করা হচ্ছে, যা তাদের চলাচলের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ঘাটটির দীর্ঘদিনের ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।
চর কাউয়া খেয়া ঘাটের মাঝি মাল্লার সভাপতি সাজ্জাদ বলেন,আমাদের এই ঘাটটি বহু পুরানো এবং ঐতিহ্যবাহী। এটি দীর্ঘ বছর ধরে স্থানীয় মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। আমরা এর স্থিতি বজায় রাখার দাবি জানাচ্ছি এবং বরিশাল জেলা প্রশাসককে এই বিষয়ে আবেদন জানিয়েছি।
এদিকে, ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, এই ঘাটটি আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকে দেখে আসছি। এটা আমাদের জন্য একটি আবেগের জায়গা। প্রতিদিন এই ঘাটটি দিয়ে লাখ লাখ মানুষ পারাপার করে। এখান দিয়ে ১০টি ইউনিয়নের মানুষ একপাড় থেকে আরেকপাড়ে যায়। ভোলা থেকে আসা মানুষও এখান দিয়ে পারাপার করে। এভাবে, আমাদের জন্য কেনো এই ঘাটটি দখল করে নেওয়া হবে? এটা কি সাধারণ মানুষের অধিকার না ।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাই বলেন, আমরা চাই, এই ঘাটটি এই জায়গাতেই রক্ষা করা হোক, কারণ এটি আমাদের চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখান দিয়ে চলাচল করেই কাজকর্মে যাবো, সবার জন্য এটি প্রয়োজনীয় একটি পথ।
একজন সাধারণ পথযাত্রী বলেন, আমরা এই ঘাট দিয়ে চলাচল করতে পারলে খুব ভালো হয়। বরিশাল মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহ আগের মেয়র শওকত হোসেন হিরণ এর উদ্যোগে ঘাটটি সংস্কার করেছেন, যেটি আমাদের জন্য অনেক উপকারে এসেছে। নতুনভাবে সংস্কার হওয়ায় এখানে চলাচলের সুবিধা অনেক বেড়েছে।
তবে, বিআইডব্লিউটি’র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এস গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার আরমান জানিয়েছেন,আমরা সরকারি উন্নয়নমূলক কাজ করছি, এবং আমাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই ঘাটের ক্ষতি করার। আমরা কাজটি সম্পন্ন করার সময় সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য দুই পাশের ওয়াকওয়ে ক্লিয়ার রাখছি। পাইলিংয়ের কাজ করছি, আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল ও সিকিউরিটি রয়েছে। আমরা নিশ্চিত করছি, ঘাটের কোনো ক্ষতি হবে না।
এদিকে, বিআইডব্লিউটি’র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই উন্নয়নমূলক কাজটি চলাচল সহজতর করতে এবং ঘাটের নিরাপত্তা বাড়াতে করা হচ্ছে। তবে, স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এই কাজের মাধ্যমে ঘাটের জায়গা দখল হয়ে যেতে পারে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করবে।
এই ঘাটটি বরিশাল শহরের গুরুত্বপূর্ণ নৌযান চলাচলের একটি কেন্দ্রস্থল। বহু বছর ধরে এটি স্থানীয় জনগণের পারাপারের মূল পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঘাটটির পাশের এলাকায় অনেক ব্যবসায়ী এবং দোকানও রয়েছে, যারা দৈনন্দিন ব্যবসা পরিচালনা করেন। ঘাটটি কেবল বরিশালের মানুষদের জন্য নয়, ভোলার মানুষদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘাটটির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যবসা এবং পণ্য পরিবহণ সেবাও অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের সঙ্গে জড়িত।
চর কাউয়া খেয়া ঘাটের স্থিতি ও মালিকানার ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের দাবি রয়েছে, এবং তারা এই ঘাটটির ওপর কোনো ধরনের অযথা হস্তক্ষেপ বা দখল বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন। তবে বিআইডব্লিউটির দাবি, এই কাজের উদ্দেশ্য ঘাটের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন করা, যাতে ভবিষ্যতে পরিবহণ ব্যবস্থায় আরও সুবিধা হয়।
বিষয়টি এখন প্রশাসনের নজরে রয়েছে, এবং বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং বিআইডব্লিউটি কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করার আশা করছেন স্থানীয়রা।