ঢাকাসোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইয়াবা : ইতিহাস, রাসায়নিক গঠন ও সেবনের ভয়াবহ ফল, সচেতনতার আহ্বান

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫ ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: রাসায়নিক মিশ্রণে ইয়াবা : শরীর ও মস্তিষ্কে কী হচ্ছে?

🔹 ইয়াবার ইতিহাস

১৯শ শতকের শেষের দিকে জাপানে সামরিক বাহিনী সৈন্যদের জাগিয়ে রাখার জন্য মেথঅ্যামফেটামিন ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের টানা যুদ্ধ করার ক্ষমতা বাড়াতে ইয়াবার ব্যবহার দেখা যায়। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মাদক ব্যবসায়ীরা একে নতুন রূপ দিয়ে “ইয়াবা” নামে ছড়িয়ে দেয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশেও এ মাদকের ভয়ঙ্কর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে।

🔹 রাসায়নিক গঠন

  • মেথঅ্যামফেটামিন : মস্তিষ্কে ডোপামিন, সেরোটোনিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়।
  • ক্যাফেইন : স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত উদ্দীপ্ত করে, ঘুম কমায় ও হৃদস্পন্দন বাড়ায়।
  • রং ও বাইন্ডার কেমিক্যাল : আকর্ষণীয় রঙ দিতে ব্যবহৃত হয়, যা অনেক সময় অতিরিক্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

🔹 শরীর ও মস্তিষ্কে এর প্রভাব

  • শরীরের উপর প্রভাব
    • হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়
    • ঘুম কমে যায়, শরীর দুর্বল হয়
    • ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস
    • লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়
  • মস্তিষ্কের উপর প্রভাব
    • অতিরিক্ত উত্তেজনা, হঠাৎ আক্রমণাত্মক আচরণ
    • হ্যালুসিনেশন ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা
    • স্মৃতিশক্তি হ্রাস
    • দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী মানসিক রোগ (সিজোফ্রেনিয়া সদৃশ)

🔹 সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতি

ইয়াবা একদিকে যেমন শরীর ও মস্তিষ্ক ধ্বংস করে, অন্যদিকে সমাজ ও পরিবারকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। ইয়াবাসেবীরা প্রায়ই চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পরিবার হারায় শান্তি, সমাজ হারায় নিরাপত্তা।

🔹 সচেতনতার আহ্বান

  • ইয়াবাকে “মজা” নয়, ভয়ঙ্কর বিষ হিসেবে চিনতে হবে
  • সন্তানদের প্রতি পরিবারের নজরদারি বাড়াতে হবে
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে
  • আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি।

 

মায়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি; মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন মিশ্রণে তৈরি ট্যাবলেটটি ব্যবহারকারীদের জীবনে গভীর ক্ষতি করছে — পরিবার ও সমাজ সচেতন হোন।

ইয়াবা — বিদেশী নামে ‘ম্যাড ড্রাগ’, ‘ভুলভুলাইয়া’ অথবা স্থানীয়ভাবে ‘বাবা’, ‘নাজি’, ‘স্পিড’, ‘হিটলার্স ড্রাগ’, ‘চকোলি’ নামে পরিচিত ট্যাবলেটটি মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন মিশ্রিত একটি শক্তিশালী সাইক্রো-অ্যাকটিভ ড্রাগ। মূলত মায়ানমারের শান প্রদেশ থেকে উৎপত্তি হলেও এটি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশে দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং ব্যবহারকারীদের শারীরিক—মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে সচেতন মহল জানাচ্ছে।

ইতিহাসগত প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ইয়াবার উৎপত্তি শান প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ওই অঞ্চলগুলোর মানুষ ঘোড়াকে তীব্র কর্মসংস্থান বা কঠিন পরিবেশে চালিত রাখার উদ্দেশ্যে মেথামফেটামিন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ করত—তারই পরিণতিতে ট্যাবলেট আকারের এই ড্রাগটির সূত্রপাত। পরে এটি থাইল্যান্ডে ‘ম্যাড ড্রাগ’ নামে পরিচিতি পায় এবং আরও পরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

ইয়াবার মূল উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন। ড্রাগের গুণগত মান বৃদ্ধির বা প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে নানা বিপজ্জনক রাসায়নিকও মেশানো হয় বলে বিবেচিত — উদাহরণ হিসেবে হাইড্রোক্লোরিক এসিড, অ্যাসিটোন (নেইল পলিশ রিমুভার), রেড ফসফরাস, ব্যাটারি-লিথিয়াম ও সালফিউরিক অ্যাসিডের মতো পদার্থের কথাও বলা হয়। এই কেমিক্যালগুলোর কারণে ট্যাবলেটটির কার্যপ্রণালী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বহুগুণ বর্ধিত ও অনিয়ন্ত্রিত হয়।

স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
ইয়াবা সেবনকারীরা মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উত্তেজনা, অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন হ্রাস, হ্যালুসিনেশন, আচরণে জোরালো পরিবর্তন এবং উন্মাদনা অনুভব করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সেবনে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়া, মানসিক রোগের লক্ষণ, যৌনতান্ত্রিক সমস্যা ও প্রজননশক্তি হ্রাসের সম্ভাব্যতা থেকেও সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। ব্যবহারকারীদের মধ্যে এমন আচরণ দেখা যায় যে তারা নিজের প্রতিবন্ধকতা বিবেচনা না করে ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরাধাত্মক কাজেও লিপ্ত হতে পারে।

সতর্কবার্তা ও আহ্বান:
যদি আপনার পরিচিত কেউ ইয়াবা সেবন করছে বলে সন্দেহ হয় — তার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকুন, লজ্জা বা লজ্জিতকরণের বদলে সহায়তার চেষ্টা করুন। দ্রুত প্রশাসন বা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা/পুনর্বাসন কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেশাদার সাহায্য নিন। যারা ইয়াবা ব্যবসা বা রপ্তানিতে জড়িত তাদের প্রতি জনগণেরও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো জরুরি। সমাজ, পরিবার ও স্বাস্থ্য বিভাগকে মিলিয়ে ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি চালানো প্রয়োজন।

উল্লেখ্য:
প্রচলিত আঞ্চলিক তথ্য ও স্থানীয় বর্ণনার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনে কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা তুলে ধরা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসমস্যা বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তথ্যের জন্য নিজ নিজ হাসপাতালে বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


ইয়াবা — মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন-ভিত্তিক একটি হিংস্র ড্রাগ, মূলত মায়ানমারের শান প্রদেশ থেকে উৎপত্তি। রক্ষণশীল রাসায়নিক মিশ্রণের কারণে এটি সেবনকারীর শারীরিক ও মানসিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। পরিচিত কেউ যদি সেবন করে, তাদের পেশাদার সহায়তায় দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন।

ইয়াবা (বাবা/স্পিড) — মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন মিশ্রিত এক ধরণের ট্যাবলেট। আপনার পরিচিত কেউ সেবন করলে লজ্জা নয়, সহায়তা দিন; দ্রুত পেশাদার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিন