নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের অনেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীন হিসেবে পরিচয় দিয়ে যারা ঘর পেয়েছেন, তারা ঘর পেয়ে তা কেউ ভাড়া দিয়েছেন, কেউ করেছেন বিক্রি। এমন অনিয়মের অভিযোগ, বরিশাল সদর উপজেলার চর আবদানিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের।
সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলার চর আবদানিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ঘুরে দেখতে গিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা একটি ঘরে দরজার পাশে দেয়ালে লেখা চোখে পড়ে জেলা প্রশাসনের এনডিসির গাড়িচালক আবুল কালাম আজাদের নাম ও ফোন নম্বর। ঘরটিতে রয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক। তারা জানান, ঘরটি গাড়িচালক আবুল কালাম আজাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া। প্রকল্পের অধীনে আরও নতুন ঘর নির্মাণের কাজ চলায় তারা সেখানে থাকছেন।
প্রকল্পের অন্য বাসিন্দারা জানান, সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা এলে কালাম দ্রুত ছুটে আসেন এই আশ্রয়ণের ঘরে। সাহায্য নিয়ে আবারও চলে যান। ঘরটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন করে নির্মাণাধীন ঘরের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা থাকছেন সেখানে।
আসমা বেগম নামের একজন জানান, ঘর পাওয়ার পর কালামকে কখনও দেখা যায়নি। তবে যখন ত্রাণ দেওয়া হয়, তখন কালাম ঠিকই উপস্থিত থাকেন। অনেক অসহায় মানুষ আশ্রয়ণে ঘর পাননি। কালাম কীভাবে ঘর পেলেন জানি না। অভিযোগ উঠেছে, জেলা প্রশাসনের আরেক গাড়িচালক সোহেলও ঘর পেয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে ঘরটি ভাড়া দেন তিনি।
মালা নামের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ভূমিহীন হয়েও ঘর পাননি তিনি। পরে সোহেলের ঘরে ৫ মাস ভাড়া ছিলেন। ৫ মাসে গুনতে হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। এরপর হঠাৎ একদিন সোহেল ঘর থেকে নামিয়ে দেয়। কী কারণে তাও জানেন না তিনি। রহিমা নামে আরেকজন জানান, যত অনিয়ম-দুর্নীতি সব হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পে। যারা প্রকৃত ভূমিহীন তারাই যেন ঘর বরাদ্দ পায় সেই দাবি জানাচ্ছি।
প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, ২৭২টি ঘর থাকলেও আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে বেশিরভাগ সুবিধাভোগী থাকেন না। ঘর নিয়ে কেউ ভাড়া দেন, আবার কেউ বিক্রি করে দেন। এমন অবস্থায় শতাধিক ঘর পড়ে আছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, গাড়িচালক সোহেল এরই মধ্যে চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে। আর এনডিসির গাড়িচালক আবুল কালাম আজাদের দাবি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক থাকাকালীন ঘর পেয়েছেন। নিজেকে দাবি করেন, প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবে। ঘর ভাড়া দেওয়া বা বিক্রির বিষয়টিও মানতে নারাজ তারা।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের গাড়িচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি যখন বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনওর গাড়িচালক ছিলাম তখন ঘরটি বরাদ্দ পাই। আমি সন্তান এবং পরিবার নিয়ে বরিশালে ভাড়া থাকি। সময় সুযোগ পেলেই ওখানে থাকি। কাজের কারণে ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কারণে স্থায়ীভাবে ওখানে বসবাস করতে পারছি না। তবে প্রথম যখন ঘর পাই ওখানে আমি স্থায়ীভাবে বসবাস করতাম। আমি প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবেই ঘর পেয়েছি।
বিষয়টি জানতে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ছাড়া জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটের সভাপতি আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, যেখানে অনিয়ম হয়েছে এখনই সেগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রকৃত ভূমিহীনরাই যাতে ঘরগুলো পায় এটা নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরি। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।
বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় পাঁচটি ধাপে মোট পাঁচ হাজার ৯৬০ জন ভূমিহীনকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর দিয়েছে জেলা প্রশাসন।