
রবিউল ইসলাম রবি :: সুস্থ ছেলেকে ডেকে নিয়ে ডিম পরোটা খাওয়ানোর পর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাদক পৌঁছে দিতে রাজি না হওয়ায় মারধরের কারণে বরিশাল লেচুশাহ মাদ্রাসা দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবু হুরাইফা শান্ত’র মৃত্যু হয়েছে। এমন অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন মরহুম শিশুর মা মিসঃ সোহানী (৩৫)। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। বিচারক মামলা আমলে নিয়ে বিএমপি কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে ‘এফ.আই.আর’ এর নির্দেশ দেন। এ সব তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন বরিশাল জজ কোর্টের আইনজীবী গোলাম মর্তুজা। দায়েরকৃত মামলার দুই আসামী হলেন, নগরীর প্যারারা রোডের বাসিন্দা ইসমাইল হাওলাদারের পুত্র সুজন (৩৭) ও বরিশাল সদর উপজেলার লামচরী গ্রামের মতলেব মোল্লার ছেলে মোস্তফা ওরফে স্বপন (৩৯)।
মামলা ও সরেজমিন সূত্রে জানা গেছে, বাদী দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল বিবি পুকুর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত ‘টিএন্ডটি গেট’ এর সামনে চটা পিঠার দোকান পরিচালনা করে আসছে। তার স্বামী দায়েরকৃত মামলার ১নং স্বাক্ষী নগরীর গীর্জা মহল্লা সড়ক সংলগ্ন ‘এল.জি বাটার ফ্রাই’ এর সামনে পান সিগারেট বিক্রি করে আসছে। তারা নগরীর ৩নং পলাশপুর ৫নং গলিতে বসবাস করে।
আসমীরা দোকানে এসে চটা পিঠা খাবারের সুবাদে বাদীর পুত্র শান্তর সাথে পরিচয় ছিল। এলাকায় তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য বিক্রয় করে আসছে। আসামীরা প্রায়ই শান্তকে ছোট ছোট পোটলা এক স্থান হইতে অন্য স্থানে পৌছানোর প্রস্তার দিত। বিষয়টিতে রাজি ছিল না শান্ত। হঠাৎ চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় আসামী সুজন চটা পিঠার দোকানে এসে শান্তে বলে “তোকে বিপ্লব ভাই ডাকে” । বিপ্লবের কথা শুনে বাদী সুজনের সাথে পুত্র শান্তকে যেতে দেয়। এর আধ ঘন্টা পরই শান্ত তার বাবার দোকানে আসামাত্রই কোন কথা না বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। শান্তকে এ সময় ভাসমান ভ্যানের দোকানে উঠাইয়া শোয়াইয়া রাখা হয়। এরপরই শান্তর মুখ থেকে ফ্যানা বেড় হয়।
বাদী সহ কয়েক স্বাক্ষী মিলে অসুস্থ শান্তে দ্রুত বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত্র অনুমানিক ১২টা বা সাড়ে বারোটার দিকে শান্তার জ্ঞান ফিরলে সে তার বাবাকে জানায়, সুজন ও স্বপন ডিম পরটা খাওয়ানোর পর একটি ছোট পোটলা অন্যত্র নিয়া যাওয়ার জন্য বলে। আমি অস্বীকার করলে তারা আমাকে মারধর করে। এর কিছুক্ষণ পরই আবারো শান্ত অজ্ঞান হয়ে যায়। পরবর্তীতে কর্মরত চিকিসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শান্তকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্ররণের নির্দেশ দেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে মরহুমের লাশ ময়না তদন্ত না করিয়া কাজী গোরস্থানে ভিকটিমের লাশ দাফন করা হয়। আসামীরা বাদী ও তাহার পরিবারকে হুমকি দিয়ে বলে, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তোদের কেও হত্যা করব। মৃত শান্তর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রগুলো দেখে বোঝা যায় ‘মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ’ এর কারণে তার মৃত হয়েছে।
মৃত. শান্তর বাবা শাহিন বলেন, হাসপাতালে আমি সন্তানের মুখে শুনেছি। তাকে মারধর করেছে সুজন ও স্বপন। যে কারণে শান্তর মৃত্যু হয়েছে।
বাদী বলেন, আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। আমার সন্তানকে ওরা মেরে ফেলেছে।
মুঠোফোনে বিপ্লব জানায়, রাজনৈতিক ২টি মামলায় বরিশাল ছেড়ে অন্যত্র রয়েছি। সুজনের ফোন দিয়ে শান্ত আমার সাথে কথা বলেছিল। তখন শান্ত বলেছিল সে শারীরিকভাবে অসুস্থ। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। কারণ আমি স্পটে নেই। শান্তকে মেরে সুজন আপনাকে ফাঁসাতে চায় কিনা ? জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন তা কেন হবে। সুজনের সাথে আমার বা পরিবারের কারো দন্দ্ব নেই। সস্পর্কে সুজন আমার ভাই।
আসামী সুজন (৩৭) জানায়, বিপ্লব শান্তকে ভালোবাসে। সেই সুবাদে আমিও ভালোবাসি। শান্তকে আমি কিছু খাওয়াইনি। ওর শরীর খারাপ দেখে ডাক্তার দেখাতে বললাম। আর ১শ টাকাও দিয়েছি।
আসামী মোস্তফা ওরফে স্বপন (৩৯) বলেন, সুজনের সাথে আমার চলাফেরা। আর সুজনের সাথে স্কুল কমিটি ও স্থানীয়ভাবে নানা লোকজনের সাথে শত্রুতা রয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রে আমিও ফেঁসে গেছি।


