ঢাকাবুধবার , ১ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল নগরীতে চলছে পানির সং-ক-ট : চাহিদার ৬০ ভাগ ঘা-টতি

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জানুয়ারি ১, ২০২৫ ৯:০০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  বরিশাল নগরীতে চলছে পানির সংকট : চাহিদার ৬০ ভাগ ঘাটতি

নগরীজুড়ে চলছে পানির সংকট। চাহিদার ৬০ ভাগ ঘাটতি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পানির এ সংকট সুস্থ জীবনকে বাধাগ্রস্ত করছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামতে শুরু করায় পাম্প হাউজের সাথে সংযুক্ত অনেক গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। নতুন করে গত সপ্তাহ খানেক ধরে নগরীর নথুল্লাবাদ ও কাজীপাড়ার পাম্প হাউজ দুটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সংযুক্ত গভীর নলকূপ থেকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়। নগরীর ৭টি ওয়্যারহেড ট্যাংকের ২টি জরাজীর্ণ। অপর ৫টিও ৩০ বছরের পুরনো।
বিসিসি সূত্র জানিয়েছে, ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ লিটার। যারমধ্যে ৩৮টি পাম্প থেকে জরাজীর্ণ ৩১০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে মাত্র ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ বরা সম্ভব। এর উপর শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পরে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সরবরাহ আরো অন্তত ১০ লাখ লিটার হ্রাস পেয়েছে। প্রতিনিয়ত এ প্রবনতা অব্যাহত আছে।
নগরীজুড়ে ঢালাওভাবে গভীর নলকূপ খনন ও স্থাপন সহ কাঁচা নালা এবং আরসিসি ড্রেন নির্মানের ফলে এ নগরীর পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছে বলে মনে করছেন পরিবেশবীদরা। নগর ভবনের পানি সরবরাহ শাখার দায়িত্বশীল মহলও বিষয়টির সাথে একমত পোষন করেছেন। পরিবেশবীদদের মতে উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রন সহ গত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টির ঘাটতি সহ প্রকৃতির নানা বিরুপ আচরণে সারা দেশের মত বরিশাল মহানগরীতেও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যভাগ থেকে এ নগরীতে পানির ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করে। গত কয়েকদিন ধরে নগরীর ৩৫টি পাম্পেই পানি উত্তোলনের হার হ্রাস পেতে শুরু করেছে।

তবে নগরীতে পানি সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নগর প্রশাসন শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের বাস্তব ক্ষমতা ৪০%-এর বেশী।

২০০৩-০৪ অর্থ বছরে বরিশাল মহানগরীর পানির চাহিদা মেটাতে নগর প্রশাসনের অনুরোধে সরকার দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ২শ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে প্রনীত ডিপিপি’ ২০০৬ সালে একনেক’এর অনুমোদন লাভ করলেও ১/১১ সরকারের সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্থগিত সহ অর্থ ছাড় বন্ধ করা হয়। পরবর্তিতে ২০১১-১২ অর্থ বছরে প্রকল্পটি বান্তবায়নে সবুজ সংকেত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। নগর প্রশাসন থেকে জমি হুকুম দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু করে এবং ২০১৮ সালে তা সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রকল্পটিতে কীর্তনখোলা নদী থেকে সংগৃহীত পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পরিশোধন করে শুধুমাত্র নগরীর ৭টি ওভারহেড ট্যাংকে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখায় তা সরাসরি নগরবাসীর কাছে পৌঁছানোর কোন উপায় নেই। এমনকি প্রায় ৫৯ কোটি টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নগর প্রশাসনের অনেক চাহিদা ও সুপারিশ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আমলে নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। সাবেক নগর প্রশাসনের আমলে অনেকটা

জোড়াতালী অবস্থায় ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটি সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হলেও গত পাঁচ বছরে তা চালু করা হয়নি। ফলে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যায়ে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ দুটি পানি শোধনাগার বরিশাল নগরবাসীর কোন কাজে আসেনি।

 

 

বর্তমানে প্লান্ট দুটি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এলক্ষ্যে দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে প্লান্ট দুটি চালু করতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্লান্ট দুটি চালু করতে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে বলেও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সব পরামর্শকদের প্রতিবেদন পাবার পরেই দ্রুততম সময়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দুটি চালু করা হবে। আগামী মাস ছয়েকের মধ্যেই প্লান্ট দুটি চালুর সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।