
নিউজ ডেস্ক :: বিএনপির দেশব্যাপী ৯ দিনের ক*র্মসূচি শুরু আজ, ৬ জেলা সফরে কেন্দ্রীয় নেতারা
বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আজ থেকে। ছয় জেলায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিএনপির ৬৪ জেলায় আট দিনের কর্মসূচি। প্রথম দিন আজ বুধবার বিকালে খুলনা, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও পটুয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশ হবে। আজকের সমাবেশে এতে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরই মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট জেলায় পৌঁছে গেছেন। বিএনপির দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) লালমনিরহাটে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, খুলনার সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ, সিরাজগঞ্জে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, সুনামগঞ্জে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী এবং পটুয়াখালীতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আশ্বস্ত করলেও দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আশ্বাসে দলের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল। তারপরও বিভিন্ন মহল থেকে বাধা আসতে পারে। কারণ, নির্বাচন প্রলম্বিত করতে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ আছে। তাই পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে দ্রুততম সময়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি। এ জন্য সরকারকে চাপে রাখতে পূর্বঘোষিত ঢাকাসহ দেশব্যাপী সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ কর্মসূচি শুরুর আগে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দিতে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা। বৈঠকে নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় অবস্থান ও মনোভাব তাঁকে জানান। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ওই দিন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন তারা।
বৈঠকে ওই নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা আশ্বস্ত করেছেন– অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তারা কাজ করছেন। নির্বাচন নিয়ে আশ্বাসের পরও বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দ্রুত নির্বাচন না দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্ররা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর সারাদেশে সংগঠন গোছানো ও সুসংহত করতে তাদের বেশ সময়ের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতও এখন তৃণমূলে সংগঠনকে গোছানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের অভিমত, এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৌশলে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করলে ড. ইউনূসের ভীতি কাটতে পারে। এর ফলে তিনি রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে এক ধরনের ভরসাও পাবেন। কারণ, ব্যাপক জনসমাগমে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে যে, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। তারা নির্বাচন দাবিতে রাজপথেও নেমেছেন। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সমাবেশ ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপি মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে নির্বাচনের যে পথরেখা দেখা গেছে, দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা হলে তা আরও পরিষ্কার হবে। একই সঙ্গে সব ধরনের সংকট কেটে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও দূর হবে। কারণ রোডম্যাপের পর পুরো দেশ তখন নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বে। দলটির নেতারা মনে করেন, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের একমাত্র পথ।
নেতারা জানান, দেশব্যাপী সমাবেশ কর্মসূচি রমজান শুরু হওয়ার আগেই শেষ হবে। রমজানে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বিএনপির। ওই মাসে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি তুলে ধরা হবে। এই সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে, রমজানের পরে রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তখন দেশব্যাপী বিভাগ ও মহানগরে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন নেতারা। এ ছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পর এসে তারা কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিকে সমর্থন করেন না। দলীয় এই অবস্থান তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন।
দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখাসহ নানা দাবিতে সারাদেশে এ সমাবেশ করবে বিএনপি। ১২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিনে এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে সমাবেশের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে সমাবেশের দিনক্ষণ ও
কেন্দ্রীয় নেতারা কে কোথায় বক্তব্য দেবেন, তার তালিকা প্রকাশ করেছে।
১৭ ফেব্রুয়ারি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (যশোর), স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান (টাঙ্গাইল), সেলিমা রহমান (মাদারীপুর), আবদুল আউয়াল মিন্টু (চাঁদপুর), শামসুজ্জামান দুদু (ঠাকুরগাঁও), আবদুস সালাম (বগুড়া), আরিফুল হক চৌধুরী (মৌলভীবাজার), জহির উদ্দিন স্বপন (ভোলা)।
১৮ ফেব্রুয়ারি
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ (কক্সবাজার), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (পাবনা), শামসুজ্জামান দুদু (পঞ্চগড়), জয়নুল আবেদিন ফারুক (কুমিল্লা দক্ষিণ), আবুল খায়ের ভুঁইয়া (ঝিনাইদহ), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (মানিকগঞ্জ), যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (হবিগঞ্জ), সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স (নেত্রকোনা)।
১৯ ফেব্রুয়ারি
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (নোয়াখালী), সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (সিলেট), দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান (কিশোরগঞ্জ), মিজানুর রহমান মিনু (কুষ্টিয়া), ফরহাদ হালিম ডোনার (শরীয়তপুর), মজিবুর রহমান সারোয়ার (পিরোজপুর), রুহুল কবির রিজভী (রাজশাহী)।
২০ ফেব্রুয়ারি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঢাকা), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (লক্ষ্মীপুর), সেলিমা রহমান (বরিশাল দক্ষিণ), আবদুল আউয়াল মিন্টু (ময়মনসিংহ দক্ষিণ), আসাদুজ্জামান রিপন (ফরিদপুর), চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান (চুয়াডাঙ্গা), মিজানুর রহমান মিনু (নওগাঁ), আবদুস সালাম (কুড়িগ্রাম)।
২২ ফেব্রুয়ারি
জয়নাল আবেদীন (ঝালকাঠি), আহমেদ আজম খান (চট্টগ্রাম দক্ষিণ), সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (ময়মনসিংহ উত্তর), হারুনুর রশীদ (জয়পুহাট), মাহবুব উদ্দিন খোকন (কুমিল্লা উত্তর), আসলাম চৌধুরী (বান্দরবান), আবুল খায়ের ভুঁইয়া (রংপুর), যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ (নরসিংদী)।
২৪ ফেব্রুয়ারি
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন (মুন্সিগঞ্জ), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বরিশাল উত্তর), ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী (নড়াইল), আহমেদ আজম খান (নাটোর), হারুনুর রশীদ (গাইবান্ধা), হাবিব উন নবী খান সোহেল (রাঙ্গামাটি), আবদুস সালাম আজাদ (মাগুরা), সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স (সৈয়দপুর)।
২৫ ফেব্রুয়ারি
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস (নারায়ণগঞ্জ), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (গাজীপুর), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (চট্টগ্রাম উত্তর), বরকত উল্লাহ বুলু (বাগেরহাট), নিতাই রায়ে চৌধুরী (সাতক্ষীরা), সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (দিনাজপুর), আমান উল্লাহ আমান (মেহেরপুর), জয়নুল আবদিন ফারুক (নীলফামারী), মনিরুল হক চৌধুরী (খাগড়াছড়ি), আবদুস সালাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)।