ঢাকাসোমবার , ১৬ জুন ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে অ*র্ধে*কের বেশি বিআরটিসি বাস মে*য়া*দো*ত্তী*র্ণ।

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুন ১৬, ২০২৫ ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল থেকে ২০টি রুটে চলাচলকারি বিআরটিসি বাসগুলোর অর্ধেকের বেশি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। গাড়ির ছাদে ত্রিপল দিয়ে বৃষ্টি ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় যাত্রিদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নিত্য গালাগাল শুনতে হচ্ছে চালকদের।

১৯৯২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুটি বাস দিয়ে বিআরটিসি’র যাত্রিসেবা শুরু হয়। বর্তমানে ২০টি রুটে চলছে ৫২টি বাস। কিন্তু বাসগুলোর মধ্যে ২৭টি বাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। কোনভাবে মেরামতের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ বাসকে যাত্রি সেবায় নামানো হচ্ছে। বৃষ্টির সময়টায় রীতিমত ভিজে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রিদের। টাকা খরচ করে এমন দুর্ভোগ মানতে নারাজ যাত্রিরা।

এক যাত্রি বলেন, বৃষ্টির সময় গাড়ির ছাদ চুয়ে ভেতরে পানি পড়ে। অবশ্যই আমরা টাকা খরচ করে এ দুর্ভোগ পোহাতে আসিনা। সংস্থাটি হয় ভালোভাবে সেবা দেবে, না হয় বন্ধ করে দিক। এছাড়া এখানে বলার কিছুই নেই। উনারা পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসেও আমি ভিজেছি। এ ধরনের সেবা আমরা চাই না।

অন্যজন বলেন বৃষ্টির সময় গাড়ির বাইরে কোনটা আর ভেতর কোনটা বোঝা যায় না। সরকারি সংস্থা হবার কারনে এদের মধ্যে এক ধরণের অহংকার কাজ করে। যাত্রি সেবা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সাধারন যাত্রি আমরা পরিবহন ব্যবস্থার কাছে জিম্মি। বৃরি সময় গাড়ির বাইরে যেভাবে ভিজতে হয় , ভেতরেও তাই। এসি গাড়িগুলোতে এসি চলে না। কেউ আমাদের কথা শোনে না।

একই  কথা বলেছে লক্করমার্কা বাসের চালক ও মাঠকর্মীরা। তারা বলেছে গাড়ির ত্রুটির কারণে যাত্রিদের খারাপ ব্যবহার সহ্য করতে হচ্ছে।

চালকদের একজন বলেন, এ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছি চাকরির স্বার্থে। কারন বৃষ্টিতে যখন যাত্রি ভিজে যায় তখন আমাদের মান ইজ্জত আর থাকে না। যাত্রিরা যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে।  এই বিষয়টা আমরা কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি।

অপরজন বলেন, গাড়িতে যাত্রি থাকে পূর্ণ। বৃষ্টি হলে আমার গায়ে আগে বৃষ্টি পড়ে। তবুও সেবা দিয়ে যাই। সমস্যা হলো বাসে যাত্রি ভর্তি থাকায় বৃষ্টির সময় যে একজন অন্যত্র আশ্রয় নেবে তারও পথ থাকে না। তাই যতো ইচ্ছে আমাদের গালাগালি করে।

২০০৫ সালে বরিশাল  বিআরটিসি বহরে যুক্ত হয় নতুন ৩০টি বাস যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালে। একইভাবে ২০১৩ সালে এখানে আসে ১০টি বাস। এরও মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ২১টি  বাস এখানে যুক্ত হয়। এই ২১টি সহ ২৫টি বাস এই ডিপোতে চলাচল উপযোগী রয়েছে। বাকিগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে রাস্তায় নামানো হচ্ছে।

বরিশাল বিআরটিসি এর ফোরম্যান সাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের পুরাতন মেরামত যোগ্য গাড়ির মধ্যে একটি সারানো হয়েছে। বাকিগুলো মেরামতের ব্যাবস্থা হচ্ছে। আসলে বৃষ্টির মধ্যে যাত্রিদের অসুবিধা হয়। তার পরেও যাত্রিদের কথা বিবেচনা করেই গাড়িগুলো চালানো হচ্ছে। তবে বৃষ্টি এলে আমরাও চিন্তিত থাকি। বেশি বৃষ্টি শুরু হলে আমরা তখন গাড়িগুলো ছাড়ি না।

ট্রাফিক অফিসার  মশিউর রহমান বলেন, যাত্রি চাহিদা অনুযায়ি আমরা গাড়ি পরিচালনা করে থাকি। তাদের সব চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও বেশিরভাগ পূরণ করি। এতো কিছুর পরেও আমরা যাত্রিদের নিরাপদে নির্দিষ্ট সময়ই গন্তব্যে পৌছে দেই। এক্ষেত্রে যাত্রিদেরও কোন অভিযোগ নেই। আমরা চালকদের গতি নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতিমাসে মোটিভেশন দেই। তাই গত ৫ বছরে আমাদের রেকর্ডে কোন দুর্ঘটনা নাই। যাত্রিদের সাথে খারাপ ব্যবহারের কোন নজির নেই।

বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ি সীমাবদ্ধতার পরেও যাত্রিদের আস্থা এখনো তাদের উপর আছে। বরিশাল ডিপো থেকে ঢাকা, খুলনা, রংপুর, যশোর, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, কাকচিরাসহ ২০টি রুটে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রি সেবা দিয়েকে।  গত অর্থ বছরে  নীট লাভ হয়েছে তিন কোটি টাকা।

বরিশাল বিআরটিসি ডিপোর ম্যানেজার জামিল হোসেন বলেন, সেবার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করি। বাসে পানি পড়া থেকে শুরু করে যাত্রিদের আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে সত্য। কিন্তু এতো অভিযোগের পরেও যাত্রিরা আমাদের ছেড়ে যায়নি। কারন আমরা যাত্রিদের জান ও মালের নিশ্চয়তা দেই। যে কোন পরিবহনের চেয়ে আমাদের ভাড়া কম এবং শৃঙ্খরা বেশি। এজন্যই যাত্রিরা আমাদের সাথে থাকায় গত বছরও আমরা ৩০ কোটি টাকা আয় করেছি এবং সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ কোটি টাকা লাভ করেছি।