
নিউজ ডেস্ক ::
অশ্বিনী কুমার দত্ত কি ভেবেছিলেন, তাঁর গড়া কলেজটি দেখতে দেখতে ১৩৬ বছর পার করে ফেলবে! ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন এই সমাজহিতৈষী নেতার হাত ধরেই জন্ম নিয়েছিল ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ)। সেই থেকে কীর্তনখোলা নদীতীরের বরিশাল শহরের গর্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ব্রজমোহন কলেজ যাঁর নামে, সেই ব্রজমোহন দত্ত ছিলেন উনিশ শতকের এক মানবপ্রেমিক ও শিক্ষানুরাগী।
গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন। তাঁর আদর্শ ও মনীষার উত্তরসূরি ছিলেন তাঁর ছেলে অশ্বিনী কুমার দত্ত। তিনিও ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও রাজনীতিবিদ। বাবার আদর্শকে স্মরণীয় করে রাখতে গড়ে তুলেছিলেন এই কলেজ।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে মাত্র ২৩ বছর বয়সে এলাহাবাদ থেকে বিএল পাস করেন অশ্বিনী কুমার। শিক্ষাকে হাতিয়ার করে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। নারী শিক্ষা, কুসংস্কার বিরোধিতা, স্বদেশি আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই ছিলেন সরব। বিএম কলেজের লাইব্রেরি বিএম কলেজের লাইব্রেরিছবি: সাইয়ান বাংলা বিভাগের নাইম ইসলাম বললেন, ‘বিএম কলেজ আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পাসের প্রকৃতি-পরিবেশ, অনবদ্য স্থাপত্য আমাদের ভেতরে একধরনের মায়া সৃষ্টি করে। এখনো আমরা এই ক্যাম্পাসে কবি জীবনানন্দ দাশের অস্তিত্ব অনুভব করি। স্মরণ করি তাঁর কবিতার পঙ্ক্তি, “জীবন ভালোবেসে হৃদয় বুঝেছে, অনুপম মূল্য দিয়ে আসছে চুপে মৃত্যুর সময়”।’ জীবনানন্দ দাশ এই কলেজের ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন। হয়তো এখানকার আলো-হাওয়া-সবুজ থেকেই জুগিয়েছিলেন তাঁর অনেক লেখালেখির রসদ। তাঁর মতো আরও অনেক গৌরবোজ্জ্বল অ্যালামনাইদের নাম আজও শিক্ষার্থীদের প্রেরণা জোগায়।
কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র রায় চৌধুরী। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত একজন ব্রিটিশ নাগরিকও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে কলেজের ৭২তম অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন শেখ মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারে ব্রজমোহন কলেজের অনন্য অবদান গোটা ভারতবর্ষেই স্বীকৃত ছিল। সেই ধারাবাহিকতা এখনো অক্ষুণ্ন রেখেছে এই বিদ্যাপীঠ।’
প্রায় ৬০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই কলেজে এখন আছে ৮টি একাডেমিক ভবন ও ৭টি ছাত্রাবাস। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম, মেহগনি, জামরুলের ছায়ায় পথচলা যেন এক কবিতার মধ্য দিয়েই হেঁটে যাওয়ার অনুভূতি দেয়। কলেজের মূল ভবনটিও কিন্তু এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের নিদর্শন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীতে গড়া হয়েছে দালানটি।
বর্তমানে এখানে ২২টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছেন। অধ্যক্ষ বাদে শিক্ষক আছেন ১৫৭ জন। বিএম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম নারী বিভাগীয় প্রধান এবং মহিলা পরিষদের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘বিএম কলেজ কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক।
এখানকার আকাশে যেমন উড়ে বেড়ায় চিন্তার পাখি, তেমনি মাটিতে গেঁথে থাকে প্রতিরোধের শিকড়। দক্ষিণের পিছিয়ে পড়া নারী শিক্ষার এক অনন্য সূতিকাগারও এই প্রতিষ্ঠান।’