
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমে নাজুক পর্যায়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতেই গড়ে দেড়শ এর বেশী রোগী ভর্তি হচ্ছেন। চলতি মাসে বরিশালের সরকারি হাসপাতালে নতুন করে দু’হাজারেরও বেশী ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবার সাথে এ সময়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে গত দু’মাসে বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবার পাশাপাশি মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন সহ এডিস মশা নিধনে নিবিড় কর্মসূচী গ্রহণে এবি পার্টি সহ বিভিন্ন শ্রেণি প্রেশার মানুষ নগর প্রশাসক ও অতিরিক্ত সচিব রায়হান কায়সারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
মে মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গু নতুন করে হানা দিতে শুরু করলেও চলতি মাসের প্রথম থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবারই বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ এ অঞ্চলের সবগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশা নিধনে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি অনুধাবনে এসব প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ করা হলেও কাঙ্খিত ফল হয়নি।
২০২৩ সালে বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ৪০ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল দুইশ জনের। গতবছর পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হলেও বর্ষার পরে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের মধবর্তি সময়েও ডেঙ্গু দাপিয়ে বেড়িয়েছে। গতবছর ১ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটে। যারমধ্যে শুধু অক্টোবরেই ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল আড়াই হাজারের মত। এসময়ে মারা গেছেন ১৭ জন।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের বর্ষার আগেই বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর উপস্থিতি লক্ষণীয় ছিল। কিন্তু মে মাসের শুরু থেকে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা ক্রমে বেড়ে চলছিল। জুনের শুরু থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করে। গত ৮জুন একদিনেই মারা গেছেন ৩ জন। যারমধ্যে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেছারাবাদের ২০ বছর বয়সি এক কিশোর ছাড়াও বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে ৮৫ বছর ও ৭৫ বছর বয়সী দুই বৃদ্ধ মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মৃত ৯ জনের মধ্যে বরগুনাতেই ৬ জন এবং শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপর ৩ জনের মৃত্যু হয়।
বরগুনা জেলা ডেঙ্গুর হটস্পট’ হিসেবে চিহিৃত হলেও পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রতিরোধ কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ইতোমধ্যে জেলাটির সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাটা প্রায় আড়াই হাজারে পৌছেছে। এমনকি মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে ৪২০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন, তার ২৪২ জনই বরগুনাতে। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন প্রায় ৭৯ জন। আগের ২৪ ঘন্টায় এ হাসপাতালটিতে নতুন করে ২১জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও ১৬ জনকে ছাড়পত্র দেয়া সম্ভব হয়। এসময়ে বরগুনার হাসপাতালে নতুন করে ৯৩জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির পাশাপাশি ৭৫ জনকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে হাসপাতালে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর বাইরে আরো কয়েকগুন বিভিন্ন চিকিৎসকের চেম্বারে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের কোন পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য দপ্তরে নেই।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে এডিস মশা নির্মূলের কোন বিকল্প নেই।