
স্টাফ রিপোর্টার :: আ.লীগের চিহ্নিত দোসর হিসেবে পরিচিত বরিশাল বানারীপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আফসানা আরেফিন গত ৫ আগস্টের পর “দোসর তকমা” রূপ পরিবর্তন করলেও অফিসিয়াল কার্যক্রমের পুরানো বদভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেনি। এখনও ইচ্ছেমতো অফিসে আসা-যাওয়া করেন তিনি। আ.লীগ শাসনামলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন অদৃশ্য ক্ষমতা শক্তি, তাই চাকুরি জীবনে তিনি ঘুরে ফিরে বানারীপাড়া উপজেলায় আসেন। সরকারি নিয়মানুযায়ী কর্মকর্তাদের একই কর্মস্থলে ৩ বছর কর্মরত থাকার পর বদলি হওয়ার নিয়ম থাকলেও আফসানা আরেফিনের বেলায় তা নিয়মবহির্ভূততে রূপান্তরিত হয়েছে। রবিবার, সোমবার সরেজমিন পরিদর্শনকালে অফিস কার্যালয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার অফিসে ঢুকে আবার বেড় হয়ে গেছেন তিনি। বুধবার অফিস করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার অফিসে ঢুকে চলে যান বরিশাল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে।
অনুসন্ধানকালে পাওয়া গেছে নানা তথ্য- আ.লীগ শাসনামলে তদবির সুপারিশে চাকুরি হওয়ায় আফসানা আরেফিন নিজ উদ্যাগে অফিস কক্ষে হার্ডবোর্ড দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রতিকৃতি নির্মাণ করে রেখেছিলেন। আ.লীগ শাসনামলে অন্যান্য অফিসের মত তার অফিসেও শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি টানানো থাকার পরও হার্ডবোর্ড দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নিজ অর্থায়নে আফসানা আরেফিন নির্মাণ করেছিল। নিজেকে খাস আ.লীগ বোঝানোর জন্য।
আ.লীগ শাসনামলে আফসানা আরেফিনের ক্ষমতার কাছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিল অসহায়। নিজের ইচ্ছামতো অফিসে আসা যাওয়া করেন তিনি। তার ক্ষমতার প্রভাব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল- ঢাকায় বসে প্রকাশ্যে মদের বোতল হাতে নিয়ে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে কিছুক্ষণ পর রিমুভ করে দেন। গত ৫ আগস্ট আ.লীগ সরকার পতনের পর আফসানা আরেফিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ও অফিসে থাকার তথ্য প্রকাশ করে কূটকৌশলে কর্মস্থল ফাঁকি দিয়ে আসছে। তার কাছে রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা। যে কর্মকর্তা যে বিষয় বা বস্তু পছন্দ করে সেই কর্মকর্তাকে তা দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলে। কর্মস্থলের আশেপাশে থাকার নিয়ম থাকলেও আফসানা আরেফিন থাকেন বাবুগঞ্জ উপজেলার নিজ বসতঘরে।
বানারীপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আফসানা আরেফিন বলেন- তার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়েছে কোন একটি পক্ষ। সকল তথ্যই উদ্দেশ্যমূলক বলেতার দাবি ।
বরিশাল জেলা পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক মেহবুব মোর্শেদ বলেন- অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন- সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কর্মস্থলে বদলির আদেশ হয় ঢাকা অফিস থেকে।
জানা গেছে, আ.লীগের শাসনামলে রাজনৈতিক ‘তদবির-সুপারিশে’ ২০১৩ সালে আফসানা আরেফিন বরিশাল হিজলা উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে চাকুরি পান। ২০১৪ সালে লবিং তদবির করে ওই পদে বানারীপাড়া উপজেলা আসেন। ২০১৬ সালে সংযুক্তি আদেশ নিয়ে (ডেপুটেশন) ঢাকা বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে যান। ২০১৮ সালের শুরুতে ওই পদেই বানারীপাড়ায় আসেন। কিছুদিন পরই ওই পদের অনুকূলে বরিশাল মুলাদি উপজেলায় প্রায় ৩/৪ মাস থেকে ঢাকা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে যান। আবার একই পদের অনুকূলে ২০১৯ সালের শুরুতে মুলাদি উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দায়িত্ব নেন। ২০২১ সালে সহকারী পদ থেকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পাওয়ার কিছুদিন পরই আফসানা আরেফিন বানারীপাড়া উপজেলার দায়িত্বে আসেন। সেই থেকে সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে এখনও একই স্থানে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তবে মুলাদি উপজেলায় ২০২৩ ও ২০২৪ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্বে থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। অফিসের পেনশন ফাইল, জিপিএফ, লাম গ্র্যান্ড, শ্রান্তি বিনোদন সহ সকল প্রকার ছুটি, শোকজ মাধ্যমে কর্মীদের জিম্মি করে ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করতেন বলে জানা গেছে।