
নিউজ ডেস্ক :: ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনা করে বরিশাল শহরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি করেছে পুলিশ। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে সম্প্রতি পাঠানো একটি গোপন বার্তার ভিত্তিতে এই সময়কালে রাজনৈতিক সহিংসতা বা নাশকতার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং অন্যান্য ইউনিট।
ইতোমধ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরজুড়ে ১৩টি চেকপোস্ট স্থাপন করেছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বরিশাল শহরের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি, মোবাইল পেট্রোল, রাতভর চেকপোস্ট, হোটেল ও ছাত্রাবাসে অভিযান চালানোর পাশাপাশি ‘ভার্চুয়াল স্কোয়াড’-এর ওপরও সাইবার গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন- নগরবাসীর স্বস্তি নিশ্চিত করতে আমরা সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছি। এছাড়া বরিশালে আগত সন্দেহভাজনদের নজরে রাখতে বাসটার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও বিমানবন্দর এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের তালিকাভুক্ত একজন ব্যক্তিকে ১১ মাস পর বরিশালে প্রবেশের সময় গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।’
এদিকে এসবির বিশেষ সতর্কবার্তায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ এবং তার ছাত্র ও যুব সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সহিংসতা বা নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে। বিশেষ করে ঐতিহাসিক ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো যে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে, তাকে পেছন থেকে বাধাগ্রস্ত করতেই ‘ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে’ এমন তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।
এসবির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কিছু সক্রিয় কর্মী দেশ ও বিদেশ থেকে ‘ভার্চুয়াল স্কোয়াড’ গড়ে তুলে সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউব এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে তারা নানাভাবে জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
চিঠিতে সকল ইউনিটকে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার, সাইবার গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং গুজব প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দেয়া তথ্য মতে- ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালনার অংশ হিসেবে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি চলছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ইউনিটগুলোকে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, মোবাইল পেট্রোল, সাইবার পেট্রোলিং ও গোয়েন্দা নজরদারি তীব্র করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাইরে থেকেও বিভিন্ন গ্রুপ বরিশালে নাশকতার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে পারে, এজন্য শহরের প্রবেশদ্বারগুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।
যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযান ও প্রস্তুতিকে ‘রুটিন নিরাপত্তা জোরদার’ হিসেবে উপস্থাপন করছে, বাস্তবতা হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মাঠের উত্তাপ, সরকারের বিরোধিতাকারী শক্তির কর্মসূচি এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের তৎপরতা একটি জটিল সমীকরণ তৈরি করেছে।
এই সময়ের মধ্যে বরিশাল শহরে কোনো বড় ধরনের সহিংসতা না ঘটলেও পুলিশি প্রস্তুতি, নজরদারি ও নিরাপত্তা ঘিরে এক ধরনের চাপ ও উদ্বেগ অনুভব করছেন নগরবাসীও। দেখা যাক, নিরাপত্তার এই ছায়া বরিশাল শহরের স্বস্তি বজায় রাখতে পারে কি না।