
নিউজ ডেস্ক :: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ১৯টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যে সব বিষয়ে ঐকমত্য বা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা জুলাই জাতীয় সনদে পরিণত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৩ তম দিনের আলোচনা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আলোচনার সময় উপস্থিত ছিলেন, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আলোচিত ১৯টি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে অর্থবিল ও আস্থা ভোটের সঙ্গে সংবিধান সংশোধন এবং জাতীয় নিরাপত্তা (যুদ্ধ পরিস্থিতি) যুক্ত করার প্রস্তাব। নারী প্রতিনিধিত্ব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সুপ্রিম কোর্ট পুনর্গঠন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি পিএসসি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নিয়ন্ত্রক ও মহা হিসাব নিরীক্ষক (সিএ অ্যান্ড জি) এবং ন্যায়পাল নিয়োগ বিষয়ে সংবিধানে পৃথক ধারা যুক্ত না করে বিদ্যমান আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনায় উচ্চকক্ষ গঠন, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, নারীর জন্য আসন বৃদ্ধির প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি ভিন্নমত প্রকাশ পেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাসদ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছে। এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও ভিন্নমত প্রকাশ করেছে।
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা বাস্তবায়নের পথ খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় একটি সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন কাঠামো থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার আহ্বান জানান তিনি। কমিশনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে ‘অনুঘটক’ হিসেবে কাজ করার কথা বলেন আলী রীয়াজ।
দ্বিতীয় পর্যায়ের আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গত ২ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩টি সেশনে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।