ঢাকাশুক্রবার , ১ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফেব্রুয়ারি ধরেই নির্বাচনী প্র*স্তু*তিতে বিএনপি

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ১, ২০২৫ ২:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: আগামী ফেব্রুয়ারি ধরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। ভোটের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার পর পুরোদমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেবে দলটি। তবে বিএনপির প্রত্যাশা, গত জুনে লন্ডন বৈঠকের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুত সময়ে অর্থাৎ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের পর গত ৯ জুলাই সব প্রস্তুতি—বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক প্রস্তুতিগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লন্ডন বৈঠকের পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বার্তা দেওয়া না হলেও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক প্রস্তুতির এ আনুষ্ঠানিক নির্দেশনাকে সরকারের ‘নির্বাচন প্রস্তুতির প্রক্রিয়া’ হিসেবেই দেখছে বিএনপি। দলটির প্রত্যাশা, গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেবেন, সেখানে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা থাকবে।

গত বুধবার ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু জানান, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে খালেদা জিয়া সেখানে অংশগ্রহণ করবেন। ভাইস চেয়ারম্যান হলেও দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালী মিন্টুর এমন কথায় রাজনীতিতে হঠাৎ করে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কি তাহলে তাদের দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করেছে? আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনের পুরোনো দাবিতে ফিরে এসেছে? তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা এমনটা মনে করেন না। তাদের মতে, বক্তব্য দিতে গিয়ে কথার রেশ ধরে তিনি এটা বলে থাকতে পারেন। এটাকে অন্যভাবে দেখার কিছু নেই।

ফেনীতে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেছিলেন, নির্বাচনে ফেনীর অতীত ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন।

সভায় মিন্টু আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটা ডেট পেন্ডিং আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন হলে তার অধীনে ৯০ দিনে নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করবেন। এখন দেশে যে অবস্থা, তাতে ফেব্রুয়ারির আগেই নির্বাচন হতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের লন্ডনে কথা হয়েছে। দুজন যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই।

ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে খালেদা জিয়া তাতে অংশগ্রহণ করবেন— নিজের এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় মিন্টু কালবেলাকে বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, লন্ডন বৈঠকের পর সরকারের প্রতিশ্রুত সময়ে অর্থাৎ আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দেশে বর্তমানে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা থেকে উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনই একমাত্র সমাধান। এমন অবস্থায় নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কথার রেশ ধরেই ডিসেম্বরের কথা বলেছি। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই।

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কালবেলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, উনি (আব্দুল আউয়াল মিন্টু) কথার পিছে কথা বলেছেন। উনি বক্তব্যের একটা পর্যায়ে বলেছেন, বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন ডিসেম্বর, জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে হয়ে যেতে পারে। তারপরে বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তাতে বেগম খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করবেন। আমি যতটুকু বুঝেছি, কথার রেশ ধরে ডিসেম্বরের কথা এসেছে।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে খালেদা জিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন: দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা নিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মী—এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল রয়েছে। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জানা গেছে, খালেদা জিয়া বর্তমানে অনেকটা সুস্থ থাকায় আগামী নির্বাচনে তাকে মাঠে রাখতে চায় বিএনপি। এরই মধ্যে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত হয়ে রয়েছে। আব্দুল আউয়াল মিন্টু গত বুধবার বিষয়টি খোলাসা করেছেন। খালেদা জিয়াকে সামনে রেখেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় বিএনপি। নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতাজনিত কারণে তারেক রহমান দল পরিচালনা করলেও খালেদা জিয়াই ঐক্যের প্রতীক, বাতিঘর।

বিএনপির চাওয়া, শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলে খালেদা জিয়া তিনটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা, যে নির্বাচনের জন্য খালেদা জিয়া কারাভোগ করেছেন, সীমাহীন জুলুমের শিকার হয়েছেন, সেই নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন। দেশের মঙ্গল ও জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে খালেদা জিয়া সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচন করলেও তার কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। ঘরে বসেই তিনি সব করবেন। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে খালেদা জিয়া নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালবেলাকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া উনার গণতান্ত্রিক অধিকার। উনি কখনো ভোটে পরাজিত হননি। সুতরাং উনি নির্বাচন করলে দলের জন্য ভালো।

খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচন করেছেন এবং প্রতিটি আসনেই বিজয়ী হওয়ার একমাত্র কৃতিত্ব তার। জীবনে কোনো নির্বাচনে তিনি পরাজিত হননি। এখানে তিনি অনন্য নেতৃত্বের অধিকারী। এটাতে প্রমাণিত হয়, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা রয়েছে—আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া যেন অংশগ্রহণ করেন। জাহাজ গভীর সমুদ্রে কখন কোন পথে যাবে, লাইটহাউস দেখে সেটা নির্ধারণ করে। তেমনি বেগম খালেদা জিয়া দলে লাইটহাউস তথা বাতিঘরের মতো থাকবেন, আমরা তাকে অনুসরণ করব। তাকে নির্দিষ্ট কোনো আসনে না রেখে পছন্দমতো আসনে তিনি নির্বাচন করবেন, আমরা সেখানে তার কর্মী হিসেবে কাজ করব—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসার পর ৮টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের দশম সংসদ এবং ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে ছাড়া একটি নির্বাচনে (একাদশ সংসদ) অংশগ্রহণ করে দলটি।