ঢাকাশনিবার , ২ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে পুলিশের উপস্থিতিতে কু*পি*য়ে হ*ত্যা করা হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবক দল নে*তা লিটুকে!

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ২, ২০২৫ ৪:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুরে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়ি ভাঙচুরসহ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা লিটন সিকদার লিটু নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আরও তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। অ্যাকটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও চলছে।

শুক্রবার (১ লা আগষ্ট) বিকেলে বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রমতে, স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিল্ববাড়ি গ্রামের মৃত নজির সিকদারের ছেলে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সিকদার লিটুকে (৪২) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

একই ঘটনায় নিহতের বৃদ্ধা মা, ছোট ভাই সুমন সিকদার (৩৫) ও বোন মুন্নি বেগম (৩৮) কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা লিটুর ঘরে ভাঙচুরসহ তার মোটরসাইকেল লুট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

শুক্রবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুন্নি বেগম জানান, তার স্বামী জাকির হোসেন গাজী গোপনে আরেক বিয়ে করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং তারা পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন। মামলার আসামি হিসেবে আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফিরলে প্রথমে পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতে একদল লোক তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘর ভাঙচুর ও আগুন দেয়। এ সময় লিটন সিকদারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং মা, বোন ও ভাইকেও আহত করা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হলেও তারা কোনো প্রতিরোধ গড়েনি। এমনকি উত্তেজনার সময় এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থলে ফিরে আসতে পুলিশের দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। লাশ নেওয়ার সময়ও হামলাকারীরা পুলিশের গাড়ি থামিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয় এবং শেষবারের মতো নির্মমভাবে কুপিয়ে ফেলে যায়।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লিটনের বাড়িতে হামলা চালানোর সময় একদল লোকের সামনের একটি পিকআপে এয়ারপোর্ট থানার এসআই শহীদুল ইসলাম উঠছেন। এক ব্যক্তি তাকে বলছেন, ‘আপনি এ পরিস্থিতিতে কোথায় যাচ্ছেন? তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান, নয়তো তাকে মেরে ফেলবে।’ ভিডিওতে দেখা যায়, এসআই শহীদুল ইসলামের সামনে উত্তেজিত জনতা লিটুর বাড়ি ভাঙচুর করছে।
এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, তিনি লিটুর বোনের দায়ের করা মামলার তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর হামলা শুরু হয়। খবর পেয়ে আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

নিহত লিটুর ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করেছেন, হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকা সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। পরে হামলা তীব্র হলে পুলিশ উপস্থিত হয়। হামলাকারীরা ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে হামলা চালায়।

আহতদের দাবি, কুপিয়ে লিটুর একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। বৃদ্ধ মা, ছোট ভাই ও বোনকেও গুরুতর কুপিয়ে জখম করা হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পারিবারিক বিরোধ থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও এয়ারপোর্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি, যার কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির শিকদার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জাকির গাজীর পক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর এবং তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এর আগে লিটু ও তার লোকজন জাকির গাজীকে আটক করে মারধর এবং বিদ্যুৎ শক দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. রিয়াদ হোসেন জানান, ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নজরদারিতে রেখেছে।