নিউজ ডেস্ক :: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আজ প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাই।’
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই দুটি বিষয়ে সাংবাদিকরা বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আজ ৫ আগস্ট ২০২৫। এক বছর আগে এই দিনেই আমরা ফ্যাসিস্ট-মুক্ত হয়েছিলাম। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ।
‘বিগত ১৬ বছর ধরে অবিরাম সংগ্রাম এবং যারা রক্তদান করেছেন, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন’ করেন বিএনপির এই নেতা।
এ সময় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন এবং চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তাদের সবার প্রতি সমাবেদনা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমাদের বিশাল অর্জন। আমরা এক বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের জন্য অনবরত সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় যে সংস্কার, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার, গণতান্ত্রিক সংস্কার, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার; তার একটা পর্যায়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি। আশা করি শিগগিরই ঐকমত্যের ভিত্তিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেটা স্বাক্ষরিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করি সেটা বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া নিয়েও যদি আলাপ-আলোচনা হয়, সেখানে আমরা অংশ নেব। অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতির যে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আগে, সেটাকে সমুন্নত রাখব এবং এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করে এই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমাজ এবং সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজ প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাই। জুলাই ঘোষণাপত্রের যেসব ঘোষণা তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যথাযোগ্য জায়গায় সংবিধানে সেটা স্থাপন করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা আগেও দিয়েছিলাম এবং জুলাইয়ের যোদ্ধাদের জুলাই শহীদদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়াটা দেব।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের প্রাণের দাবি এবং যারা আহত হয়েছেন, যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের বিভিন্নভাবে আইনি সুরক্ষা সহযোগিতা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) যেমন দিয়েছেন, সারা জাতি দিয়েছে, আমরাও দিচ্ছি।’
তপশিল নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আগামী দিনে আমাদের নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য যে পরিবেশ সৃষ্টির করতে প্রধান উপদেষ্টা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, “নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠাবেন। আগামী ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজান শুরু হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন”। অবশ্যই নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফশিল ঘোষণা করবেন।’
‘প্রধান উপদেষ্টা আজ যেই নির্দেশনা দিয়েছেন, তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং চিঠি প্রদান করবেন নির্বাচন কমিশনকে। যা বলেছেন, সেই ঘোষণার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম এবং সারা জাতি অপেক্ষা করছিল’ বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে একটি দোদুল্যমানতা ছিল বলে অনেকে মনে করছিলেন। তাদের মধ্যে সেই দোদুল্যমানতাটা রইল না এবং সারা জাতি একটি নির্বাচনমুখী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাবে এবং সেই নির্বাচনের আবহ সৃষ্টি হবে। আগামী দিনের নির্বাচন ইনশআল্লাহ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশা করি। সেই লক্ষ্যে সমগ্র জাতিকে এবং সমস্ত জনগণকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমরা আমাদের পক্ষ থেকেও আহ্বান জানাচ্ছি।’
নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পর রাষ্ট্রের যে ভারসাম্য নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন উঠছে, আজ থেকে সেই সংকটটা কেটে গেল কি না?
এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং কোনো রকমের কোনো অনিশ্চিত পরিবেশ বা ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগে আর বাধা থাকবে না। সবকিছুই সচল হবে এবং গতিশীলতা পাবে। এটাই আশা করি।’