
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বিবির পুকুর খাঁচায় বন্দী
নগরীর হৃদয়ে শুয়ে থাকা শতবর্ষী জলাশয় ‘বিবির পুকুর’ এক সময় ছিল শহরের জীবন্ত পরিচয়, তার পানির গভীরতা, স্বচ্ছতা আর ঝলমল আলোতে ভরপুর। তবে সময়ের সাথে সাথে তার সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে, আর নতুন একটি বিতর্ক এই পুকুরের ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সদর রোডের এই পুকুরটির ইতিহাসে আজ আর সেই আগের রঙিন দৃশ্য নেই। জলের গভীরতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলেছে। অথচ, সম্প্রতি পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফোয়ারা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে, এখন নতুন বিতর্কের জন্ম নিয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার রাতের অন্ধকারে পুকুরের দক্ষিণ প্রান্ত ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে একটি লোহার গরাদ, যা একেবারে খাঁচার মতো কাঠামো। পুকুরের এই অংশে নেট দিয়ে পুরো জায়গাটি ঢেকে ফেলার প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এতে হারিয়ে যাবে পুকুরের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও খোলা আকাশের মুক্ত পরিবেশ। এই পদক্ষেপের ফলে পুকুরটি আর খোলা ও প্রাকৃতিক থাকবে না, বরং একটি কৃত্রিম পরিবেশে বন্দী হয়ে পড়বে।
এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগে, বরিশাল শহরের বেলস পার্ক লেকের চারপাশে প্রাচীর তুলে ঘিরে ফেলার উদ্যোগে প্রতিবাদ উঠেছিল শহরবাসীর কাছ থেকে। সে সময় নাগরবাসী মানববন্ধন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে ওই উদ্যোগটি স্থগিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই উদ্যোগের স্থায়ী সমাধান হয়নি, এবং এখন সেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি বিবির পুকুর।
স্থানীয়রা মনে করছেন, পুকুরের খাঁচায় বন্দী হয়ে যাওয়ার ফলে এর ঐতিহাসিক সৌন্দর্য ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। একসময়ের সজীব জলাশয় আজ যেভাবে সংকটের মধ্যে পড়ছে, তাতে ভবিষ্যতেও এর প্রকৃত সৌন্দর্য ও গুরুত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিবির পুকুরে এমন পরিবর্তন শহরের ঐতিহ্য ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই স্থানীয়দের আহ্বান, যেন এই জলাশয়টির সঙ্গে সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়।