
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরগুনায় চাঁদা না পেয়ে স্কুল শিক্ষককে অপহরণ, নির্যাতন
বরগুনার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষককে পূর্ব শত্রুতার কারণে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা না পেয়ে রাতভর নির্যাতন করায় ওই শিক্ষক শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করে আমতলী থানায় মামলা করা হয়েছে।
অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়া ওই শিক্ষকের নাম মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার গৌরচন্না ইউনিয়নের ধুপতি গ্রামের ইউনুস আলী মীরের সন্তান। একই সঙ্গে চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক।
শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে অপহরণ ও নির্যাতনে প্রধান আসামি হলেন আমতলী হলদিয়া ইউনিয়নের আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ও চরকগাছিয়া গ্রামের মৃত রশীদ মোল্লার ছেলে মিজানুর রহমান। অন্য আসামিরা হলেন-ঘোপখালী গ্রামের মৃত ছালাম তালুকদারের ছেলে আবুল কালাম আজাদ ওরফে নয়া মিয়া, তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামের আবুল কালাম তালুকদারের ছেলে তোতা মিয়া ও ঘোপখালী গ্রামের শাহজাহান তালুকদারের ছেলে মো. সেলিম। মামলায় কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগ পদে মো. রফিকুল ইসলাম ও প্রধান আসামি মিজানুর রহমান আবেদন করেন। সেখানে রফিকুল ইসলামের চাকরি হওয়ায় বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি মিজানুর রহমান। এরপর থেকেই তিনি রফিকুল ইসলামকে প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
গত ২১ অক্টোবর মিজানুর রহমান তার দলবল নিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্রবাসে ঢুকে গলায় দেশীয় অস্ত্র ধরে এবং স্টীলের লাইট দিয়ে আঘাত করে শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে আহত করে। এসময় তারা তাকে খুনের ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর রফিকুল ইসলামের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়ে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রফিকুল ইসলামকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এছাড়া তার কাছ থেকে সোনালী ব্যাংকে এটিএম কার্ড ও পাসওয়ার্ড নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমি কেন বরগুনা থেকে এসে এখানে শিক্ষক নিয়োগ পেলাম এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি মিজানুর রহমান। সেই রেশ ধরে মিজানুর রহমান আমাকে মারধর করে খুনের ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে এবং ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদেরকে টাকা দিতে পারিনি বলে আমার শরীরের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের নির্যাতনে আমি শ্রবণশক্তি ৬০% হারিয়ে ফেলেছি। আসামিরা আমার মোটরসাইকেল, ল্যাবটপ, এটিমকার্ডের থাকা ৮০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
এঘটনা বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ, মিজানুর রহমানের সহযোগীরা গত ৫ আগস্টের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে গেছে। লুটপাট, চাঁদাবাজি, মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। রফিকুল ইসলামের মত একজন ভদ্র ও নিরীহ শিক্ষককে মারধর করে তার টাকা পয়সা, ল্যাবটব মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ জানিয়েছেন।
এবিষয়ে আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, শিক্ষককে নির্যাতন করে অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় সোমবার রাতে আমতলী থানায় মামলা রুজু হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশি অভিযান চলছে।


