নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে গ্রাহকের একাউন্ট থেকে ৯ লক্ষ টাকা উধাও
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় শহর বরিশালের একজন বাসিন্দা অভিযোগ করছেন যে সেখানকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে তার হিসেব থেকে নয় লাখ টাকা ‘উধাও’ হয়ে গেছে। এনিয়ে ব্যাংকের অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুরো বিষয়টি ব্যাংকের তরফ থেকে তার উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
বরিশালের বাসিন্দা হলেও মোহাম্মদ হাসান খান বিন মোহাম্মদ সুলতান খান গত ১৫ বছর যাবত মালয়েশিয়া প্রবাসী। দেশের টাকা পাঠানোর সুবিধার্থে তিনি বরিশালে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন ২০১৮ সালে।
মি. খান সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তার অ্যাকাউন্ট থেকে তিনটি চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নয় লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব চেক তিনি ইস্যু করেননি বলে দাবি করেন মি. খান। গত ১৯ শে ডিসেম্বর তিনি অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে গিয়ে বিষয়টি তার নজরে আসে।এ বিষয়টি নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। সেখানে প্রতিকার না পেয়ে মি. খান গত ২২ শে জানুয়ারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।মি. খান অভিযোগ করেন, তার অজান্তে তার হিসেব থেকে টাকা অন্যত্র চলে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হুমায়ুনের সাথে।
মি. হুমায়ুন বলেন, “উনি তো আমাদের হেড অফিসে অভিযোগ করেছেন। হেড অফিস বিষয়টা দেখতেছে, বিষয়টা এ রকম। উনি চেক দিয়েছেন হয়তো কাউকে। সে চেক দিয়ে ওনার টাকা উনি তুলে নিয়ে গেছেন।”
মি. হুমায়ুন দাবি করছেন, তারা বরিশাল শাখার পক্ষ থেকে দেখেছেন, যেসব চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে সেখানে গ্রাহকের স্বাক্ষর রয়েছে। চেক অনার করার ক্ষেত্রে ব্যাংক সব ধরণের নিয়ম মেনে করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।ব্যাংক হিসেবে থেকে টাকা উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে মোহাম্মদ হাসান খান বিন মোহাম্মদ সুলতান যে অভিযোগ করছেন সেটি একটি উদাহরণ মাত্র।
প্রকৃতপক্ষে মি. খানের ক্ষেত্রে ঘটেছে সেটি এখনো তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়নি। এখানে কোন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে কি না সেটিও তদন্ত শেষ না হবার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।গ্রাহক প্রতিকার পাবে কীভাবে?
ব্যাংক হিসেবে লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে কোন জালিয়াতির ঘটনা না ঘটে, কিংবা গ্রাহকের স্বার্থহানি না হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু নীতিমালা করেছে।
টাকা লেনদেন করার ক্ষেত্রে ব্যাংক কোন ধরণের নিয়ম অনুসরণ করবে এবং গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে সেটির প্রতিকার পাবার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু বিধি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি এন্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট এসব নির্দেশনা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, একটি স্থিতিশীল আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবার মানোন্নয়ন এবং গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তারা যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। সেজন্য নানা নিয়ম-কানুন তৈরি করা হয়েছে।
কোন ব্যাংক সম্পর্কে যদি গ্রাহকের অভিযোগ থাকে তাহলে বাংলাদেশের নম্বর ১৬২৩৬ নম্বরে ডায়াল করে অভিযোগ জানাতে পারেন। এছাড়া ই-ইমেল করে কিংবা চিঠি দিয়ে অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ আছে।এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে তিনটি ধাপে অভিযোগ
প্রথম ধাপটি হচ্ছে; যে শাখায় ঘটনাটি ঘটেছে সে শাখায় ব্যবস্থাপকের কাছে অভিযোগ দায়ের করে প্রতিকার চাওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে; গ্রাহকের অভিযোগ যদি সংশ্লিষ্ট শাখা নিষ্পত্তি করতে না পারে তাহলে সেই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করা।
তৃতীয় ধাপটি হচ্ছে; ব্যাংক যদি অভিযোগের প্রতিকার দিতে না পারে তাহলে গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দায়ের করতে পারে।
তবে যেসব অভিযোগ আদালতে বিচারাধীন থাকে সেগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনা। এছাড়া অভিযোগের স্বপক্ষে যদি পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ না থাকে সেক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন নিষ্পত্তি করতে পারে না।
সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বলেন, তথ্য-প্রমাণ যদি গ্রাহকের পক্ষে থাকে তাহলে তার স্বার্থ কোনভাবেই ক্ষুণ্ণ হবে না।
তিনি বলেন, গ্রাহকের হিসেব থেকে টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার কোন অভিযোগ আসলে ব্যাংক সেটিকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখে। কারণ এর সাথে গ্রাহকদের আস্থার বিষয়টি জড়িত।“এটা গ্রাহকদের আস্থার ব্যাপার। ব্যাংকে টাকা রাখলে এবং সেটি চলে গেলে গ্রাহক যদি প্রতিকার না পায়, সেটার প্রভাব অনেক বেশি হয়। এটা ব্যাংকাররা অনুধাবন করে।”
“ব্যাংকাররা এটা জানে যে কোন না কোনভাবে অবৈধ উপায়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে গেলে সেটা তারা দিতে বাধ্য থাকবে।”গত দেড় দশকে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। অটোমেটেড চেকবই, অনলাইন ব্যাংকিংসহ নানা পরিবর্তন হয়েছে। লেনদেনের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবার বিধান রয়েছে। কিন্তু তারপরেও মাঝ-মধ্যে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়।
“ব্যাংকের প্রতিটি লেনদেনের একটি ট্রেইল বা পিছু দাগ থাকে। ব্যাংকের ভেতরে কাউকে না কাউকে ব্যবহার না করলে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বের করে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়।”
ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রাহকের উচিত তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স সম্পর্কে প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখা বা আপডেট থাকা।
লেনদেনের ক্ষেত্রে নিয়ম
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট-এর নিয়ম অনুযায়ী কোন গ্রাহক যতি বেশি অংকের চেক ইস্যু করে তাহলে গ্রাহকের পক্ষ থেকে একটি সম্মতিপত্র দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ক্ষেত্রে পাঁচ লক্ষ টাকা ও তার বেশি টাকার চেক পরিশোধের ক্ষেত্রে ‘পজিটিভ পে’ বা ‘গ্রাহক সম্মতি’ প্রয়োজন।
ব্যাংকার নুরুল আমিন বলছেন, যে কোন লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকাররা খুবই সচেতন ও সাবধান থাকেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের ব্যত্যয় হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম বলছে – চেক জাল করে গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ জালিয়াতি বা প্রতারণার ঘটনায় ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে যদি প্রমাণ হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা জড়িত আছে তাহলে গ্রাহককে তাৎক্ষনিকভাবে দাবি পূরণ করতে হবে।
ব্যাংকাররা বলছেন, কোন গ্রাহক যদি ব্যাংক কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট না হয় সেক্ষেত্রে আদালতে প্রতিকার পাবার সুযোগ রয়েছে।
মি. আমিন বলেন, গ্রাহকের টাকা অন্যায়ভাবে তসরুপ করে পার পাবার খুব একটা নজির নেই।