ঢাকারবিবার , ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ মাস পার,পুলিশ ফিরলেও ফেরেনি গতি

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ ২:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ মাস পার,পুলিশ ফিরলেও ফেরেনি গতি

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই আত্মগোপনে চলে যান তখনকার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারসহ বাহিনীটির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আতঙ্কে গা ঢাকা দেন থানাসহ বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের এক দিন আগেই নতুন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। বাহিনীতে গতি ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফেরাতে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পার হলেও আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো ঢাকাসহ বিভিন্ন মেট্রোপলিটন এলাকা ও জেলাগুলোতে পুলিশ টহল কার্যক্রম বা দৈনন্দিন অপারেশনাল কার্যক্রমে যেতে পারেনি। এতে মাঝেমধ্যেই খুন, ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধ সংঘটনের মতো ঘটনা ঘটছে। থানার কার্যক্রম শুরু হলেও পুরোপুরি নাগরিক সেবাও দেওয়া যাচ্ছে না। এক মাসে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণও পুরোপুরি নেওয়া যায়নি। এতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নগর ও শহরগুলোর সড়কে গাড়ির বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও লম্বা যানজট সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের ট্রাফিক সদস্যরা আইন ভঙ্গকারী যান বা চালকের বিরুদ্ধে মামলা বা প্রসিকিউশনও দিতে পারছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিন দেখা গেছে, থানায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও অনেকটা আতঙ্ক আর অস্বস্তিতে থাকেন তারা। এজন্য বাইরে টহল বা দৈনিক অপারেশনাল কার্যক্রমে যাচ্ছেন না পুলিশ সদস্যরা। থানায় আসার সময় ব্যাগে করে ইউনিফর্ম নিয়ে আসেন এবং দায়িত্ব শেষ করে তা ব্যাগে করে বাসায় ফেরেন। মোটরসাইকেলে পর্যন্ত ‘ডিএমপি’ বা ‘পুলিশ’ লেখা লোগো মুছে দিয়ে তারা চলাফেরা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আগের সরকার পুলিশ বাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। এর জেরে সরকার

পতনের দিন এবং আগে-পরে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। বিভিন্ন থানা ও পুলিশ স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়। গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা ছাড়াও ব্যাপকভাবে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু নতুন আইজিপি দায়িত্ব নিয়ে বাহিনীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে নানা চেষ্টা চালাচ্ছেন। দ্রুততম সময়ে দেশের সব থানার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন উত্তেজিত জনতার আক্রমণে সাড়ে ৪শ থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১২০টি থানা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছোট-বড় এক হাজার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে লুট হয় ৫ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখের বেশি গোলাবারুদ। আত্মরক্ষায় প্রায় সব থানা থেকেই পুলিশ সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে এক মাসের মধ্যে পুলিশের কার্যক্রম পুরোপুরি না হলেও তা শুরু করা সম্ভব হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর কালবেলাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীকে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। অপারেশনাল গাড়ি ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় টহলসহ অন্যান্য কার্যক্রম কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছিল। তবে সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে সমন্বয় করে টহলসহ নানা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দ্রুতিই লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের মনোবল পুরোপুরি ফেরাতে নানা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের আটটি মেট্রোপলিটনে নতুন কমিশনার, আটটি রেঞ্জে নতুন ডিআইজি ও ৫০টি থানায় নতুন এসপি পদায়ন হয়েছে। তারা দায়িত্ব নিয়ে দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।’

পুলিশ সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন, কেউ পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। এতে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ায় অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বাহিনী। তা ছাড়া ছাত্র-জনতাকে গুলির নির্দেশদাতা বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। অনেকে মামলার মুখে পড়ে পলাতক। তা ছাড়া এখনো পরিদর্শক, অ্যাডিশনাল এসপি ও ডিআইজি পর্যন্ত ৭শ থেকে ৮শ সদস্য কাজে যোগ দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সময়ের বিষয়। দ্রুততম সময়েই স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

এদিকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ৫ আগস্টের পরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছাড়াও মহাসড়কেও থ্রি-হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মতো যান চলাচল করছে। নানা কারণেই ট্রাফিক সদস্যরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রসিকিউশন প্রয়োগ বা মামলা দিতে পারছে না। ফলে যেখানে সেখানেই গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় সড়কে বিশৃঙ্খলা থাকাটা স্বাভাবিক। তা ছাড়া দিনে বিভিন্ন পয়েন্টে সার্জেন্টসহ ট্রাফিক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও রাতে তারা দায়িত্ব পালনে অস্বস্তিতে থাকছেন। দিনভর দায়িত্ব পালন করলেও বিশ্রাম নেওয়ারও জায়গা নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) খন্দকার ফরিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘মূল সড়কে ঢুকে পড়া রিকশা-অটোরিকশাসহ অনুমোদনহীন বাহনগুলো অপসারণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা কারণে তারা এখনো পুরোপুরি প্রসিকিউশন বা মামলা দিচ্ছেন না। কেউ উল্টোপথে গেলে বা সড়ক দখল করে পার্কিং করলে ট্রাফিক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’