ঢাকামঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে সবকিছুতেই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ : চারিদিকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২৬, ২০২৪ ৫:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে সবকিছুতেই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ : চারিদিকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ।

সিঁড়িগুলোতে পলেস্তারা উঠে গেছে, দেয়ালে খসে পড়ছে। ছাদ নতুন রং করা হয়েছে তাই এই মুহূর্তে পলেস্তারা দেখা যাচ্ছে না।

চারিদিকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। টয়লেট, ড্রেন সবকিছুতে অযত্নের  ছাপ স্পষ্ট। দেয়ালগুলোতে কফ, পানের পিক আর চুনের দাগ দিয়ে রীতিমতো নকশা আঁকা হয়েছে। রোগীদের বসার জন্য যে দু/চারটে বেঞ্চ পাওয়া গেল তাও ভাঙাচুরা। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের সেবা নিতে গিয়ে এ চিত্র চোখে পড়ে তিনটি ভবনের ভিতর ও বাইরে। বরিশাল অঞ্চলের ছয় জেলা ছাড়াও মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বরিশালে দুটি উল্লেখযোগ্য হাসপাতাল তৈরি করা হয়। এর একটি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যটি জেনারেল হাসপাতাল। দুটো হাসপাতালকে ঘীরেই রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যের গর্বিত পদচারণার গল্প। ১৯১২ সালে মাত্র ২০শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল। নব্বই দশকে এটিকে ৮০ শয্যা করা হয় এবং কলেরা ওয়ার্ডের ২০ শয্যাসহ মোট ১০০ শয্যায় উন্নীত হয় বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল। সম্প্রতি এটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ ১২ তলা ভবন নির্মাণ ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় তলার কাজ চলমান দেখা গেছে। যদিও চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে মূল হাসপাতাল এলাকা থেকে আলাদা করে রাখার কারণে নবাগত কারো বোঝার সাধ্য নেই যে নির্মাণাধীন ঐ ভবনও হাসপাতালের অংশ। দূর দূরান্ত থেকে আগত রোগীরা প্রথমে পুরাতন লাল ভবন থেকে টিকেট সংগ্রহ করেন। আউটডোর এবং ল্যাবরেটরি এই ভবনেই। ল্যাবরেটরিতে কর্মরত কর্মীদের কারো কোনো পৃথক পোশাক নেই। নেই টিস্যু, কস্টেপ এবং রক্ত বন্ধ করার জন্য তুলা ছাড়া আর কোনো উপকরণ।

চারপাশের ময়লা আবর্জনা সম্পর্কে ল্যাবরেটরি থেকে একজন জানালেন, পুরো হাসপাতালের তিনটি ভবনের জন্য দুজন মাত্র সুইপার আছেন। আউটসোর্সিং থেকে যাদের নেওয়া হয়েছে তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত। ফলে তাদের এ কাজের জন্য বলাটা সহজ হয়না বলে জানান তিনি। এদিকে রক্ত পরীক্ষা হলেও এক্সরে বা আল্ট্রাসনোগ্রাফীর মতো বড় বড় পরীক্ষাগুলো এখানে হয়না। এজন্য রোগীদের ছুটতে হবে বাইরে।

এখানেও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতোই প্রশাসনিক কাঠামো। আগে এই দুটি হাসপাতালের সভাপতি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। এখন এ দুটো হাসপাতালের দায়িত্ব জেলা প্রশাসক সামলাচ্ছেন বলে জানান কর্মচারীদের একজন। তিনি বলেন, এখানে লোকবল সংকটের কারণে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা বিঘিœত হচ্ছে। তারপরও নারী ও শিশুদের জন্য এই হাসপাতালের সুনাম রয়েছে। আবার জলাতঙ্ক বা সাপের কামড়ের চিকিৎসা এখানেই। এটা অন্যকোনো হাসপাতালে নেই বলে জানান তিনি।

নারীদের জন্য এখানে গাইনী বিভাগের ডাক্তার রেহানা ফেরদৌস এর সুখ্যাতি বরিশাল বিভাগ ছাড়িয়ে অন্যান্য জেলাতেও। যে কারণে নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় নারীদের উপচে পরা ভিড় চোখে পড়ে। তবে এখানেও সমস্যা। দূরদূরান্ত থেকে আগত রোগীদের বসার কোনো ব্যবস্থা এখানে নেই। জলাতঙ্ক বিভাগের সামনে দুটো বেঞ্চ রয়েছে। তার একটি ভাঙা। আশেপাশের দেয়াল ও সিঁড়ি এতোটাই নোংরা যে গাঁ ঘিনঘিন করে। যদিও ফ্লোর নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়া হয় তা স্পষ্ট। তবে মোছা হয়নি হয়তো গত ছয়মাসে একবারও।

এদিকে কলেরা ভবনের টয়লেট নিয়ে রোগীর অভিযোগ কানেই নেয়না প্রশাসন। আসলে প্রশাসন কেউ আশেপাশে থাকলেতো শুনবেন। এখানে নার্স আর ওয়ার্ড বয়রাই রাজত্ব করছেন। রয়েছেন শিক্ষানবিশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে। যারা বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত মোবাইল নিয়ে নয়তো নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা মশকরায়। এমন চিত্র দেখা গেছে জুনিয়র সার্জন ডাঃ কবির মিয়ার কক্ষে।
এই হাসপাতালের সেবা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বরিশালের ষাটোর্ধ্ব সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান এর সাথে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে এখানে ১২ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন হয়েছিল। এখন কি অবস্থা জানিনা। পুরাতন সব ভবন ভেঙে ঐ নতুন ভবন হওয়ার কথা। দক্ষ লোকবল সংকটের কারণে হাসপাতালের অনেক জরুরী চিকিৎসাসামগ্রী নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি।