
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর ১৫ হাটবাজার থেকে বাড়তি খাজনা আদায় : প্রশাসন নীরব।
নগরীর ১৫টি হাটবাজার থেকে গতবারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। এতে সব কটি বাজারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বাড়তি খাজনার কারণে পণ্যের দামও বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এদিকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নগরীর হাটবাজারগুলো ঘটা করে ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন; কিন্তু খাজনা আদায়ের হার উল্লেখ করে বাজারগুলোতে মূল্যতালিকা না সাঁটানোয় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ঠকছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর চৌমাথা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের দোকানগুলোতে দুই যুবক ঘুরে ঘুরে খাজনা তুলছেন। যাঁর দিতে বিলম্ব হচ্ছে, তাঁকে ধমকাচ্ছেন তাঁরা। খাজনা আদায়কারীদের একজন ব্যবসায়ী লিটন, অপরজন রাসেল। তাঁদের মধ্যে রাসেল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি (পদ স্থগিত) মশিউর রহমান মঞ্জুর অনুসারী। ওই বাজারে কথা হয় এক তরকারি বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছরও ১০০ টাকা খাজনা দিতেন। এখন তা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়েছে, এ ব্যাপারে প্রশাসন কোন নজরদারি নেই, যার জন্য ইচ্ছামত খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
গরুর মাংসের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর ৭০ টাকা আদায় করা হলেও এখন প্রতিটি দোকান থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে মাছের দোকানগুলো থেকে। নগরের পোর্ট রোডের প্রধান মাছের মোকাম থেকে মণপ্রতি খাজনা নিলেও চৌমাথা বাজারে বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৪-৫ শতাংশ হারে। এমনকি নগরীর চৌমাথা থেকে হাতেম আলী কলেজ পর্যন্ত রাস্তায় বসা ভাসমান দোকানিদের কাছ থেকে ২০-৩০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারের ৩০০টি বৈদ্যুতিক বাল্ব বাবদ প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে নগরের চৌমাথা বাজারের ইজারাদার মুরাদ চৌধুরী দাবি করেন, বেশি খরচে বাজার ইজারা নেওয়ায় খাজনাও বেশি আদায় করতে হচ্ছে।
চৌমাথা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিব সিকদার বলেন, ‘ইজারাদার বেশি টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছেন। তাই বাজারের খাজনাও বাড়ছে। আগে যেখানে ১০০ টাকা নিত, সেখানে এখন ১৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন বাজারে চার্ট টাঙিয়ে দিক। তাহলে বাড়তি খাজনা নিতে পারবে না।’
নগরের সাগরদী বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কাঁচামালের দোকান থেকে আগে নেওয়া হতো ২০ টাকা। ১ বৈশাখ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। মুরগি, মাছ ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শতকরা তিন টাকা নেওয়া হচ্ছে। আগে নেওয়া হতো দৈনিক মাত্র ৫০ টাকা।
এদিকে নগরীর রূপাতলী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সেখানে বৈশাখের প্রথম দুই দিন মাংসের প্রতিটি দোকান থেকে ৫০০ টাকা খাজনা ধরা হয়, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। একইভাবে মুরগির দোকান থেকে ২০০ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা, তরকারির দোকান থেকে ১৫০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা, মুদিদোকানের জন্য ২৫০ টাকা খাজনা নির্ধারণ করেন নতুন ইজারাদার। তবে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে খাজনা আগের রেটে নেওয়া হচ্ছে।
রূপাতলী বাজারের একাধিক দোকানি জানান, সিটি করপোরেশনের রেটের চেয়ে এখনো বেশি খাজনা নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাঁরা রসিদ ছাড়া খাজনা দেবেন না। তবে রূপাতলী বাজারের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাঁরা রেট চার্ট হাতে পাননি, তাই টাকা উত্তোলনে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে নগরের পোর্ট রোড বাজার, নথুল্লাবাদ বাজার, নতুন বাজার, কাশিপুর বাজার, বটতলা ও বাংলাবাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদার।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের হাটবাজার শাখার তত্ত্বাবধায়ক নুরুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্যে খাজনা আদায় করতে হবে। জোর-জুলুম করে কোনো বাজারে খাজনা তোলার লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তার ওপর পণ্য বিক্রি বন্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বরিশাল সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, নগরের বাজারগুলোতে বাড়তি খাজনা নেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। বাড়তি খাজনা নেওয়ার সুযোগ নেই। বাজারগুলোতে দৃশ্যমান জায়গায় খাজনার মূল্যতালিকা না থাকা প্রসঙ্গে রেজাউল বারী বলেন, খাজনার মূল্যতালিকা বাজারের দৃশ্যমান স্থানে সাঁটিয়ে দেওয়া হবে।