ঢাকাশনিবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

একদিকে নদী ভা*ঙ্গ*ন অন্যদিকে ইটভাটার মাটি কে*টে নেওয়ায় অ*তি*ষ্ঠ গ্রামবাসী

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
এপ্রিল ২৬, ২০২৫ ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি  :: একদিকে নদী ভাঙ্গন অন্যদিকে ইটভাটার মাটি কেটে নেওয়া এবং বালুখেকো প্রভাবশালীদের জ্বালাতনে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী । তার উপর রয়েছে সড়ক পথে বরিশাল ও বাকেরগঞ্জ শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থার করুন অবস্থা। সবমিলিয়ে নদীতে ও সড়কে আতঙ্কিত জীবনযাপন বরিশালের বাকেরগঞ্জের কবাই ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের। ২৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নাম ডিসি রোড। খোদাবখশ কাঠ, শিয়ালগুনি, কাটাখালি, চুনাখালি, উত্তর কবাই, হানুয়া, পেয়ারপুর, ঢোলা, কুন্ডের বাজার, লক্ষ্মিপাশা গ্রামের হাজারো মানুষের চলাচল এই ডিসি রোড নির্ভর। সরেজমিনে ২৫ এপ্রিল শুক্রবার নদী ভাঙ্গন চিত্র ধারণ করতে এসে বরিশালের সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়ন হয়ে গোমা খেয়াঘাট তারপর পেয়ারপুর বাজার এসেই থমকে যেতে হয় ভাঙাচুরা রাস্তা ও খানাখন্দের কারণে। পেয়ারপুর বাজার থেকে ডিসি রোড পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের খানাখন্দ পেরিয়ে কবাই ও শিয়ালগুনি গ্রামে আসতে দফারফা। এখানে সড়কের পাশ ঘেঁষেই বয়ে গেছে খরস্রোতা কারখানা নদী। বাজারসহ প্রায় ১০/১২টি গ্রাম ইতিমধ্যেই বিলিন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। সড়কের দুপাশের বেশকিছু দোকানের ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও আশেপাশের বাসিন্দারা ছুটে এসে জানালেন, দুধল ইউনিয়ন থেকে হতরাজ বাজার, শিয়ালগুনি তারউপর সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন থেকে বালুমহল ইজারা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে এই এলাকা আরো হুমকির মুখে পড়েছে। কেননা বালুমহল ইজারাদাররা তাদের নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে গ্রামের সীমানার বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার বসিয়ে বালু ও মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে গত সোমবার মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে গ্রামবাসী।
এসময় স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহ আলম, ছাত্রদল নেতা আরাফাত রহমান, স্থানীয় বাসীন্দা ফারক হোসেন, স্বপন খান সহ অনেকেই ছুটে এসে তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরেন। গ্রামবাসী বলেন, ডিসি রোড হলেও আদতে এটি বরিশালের সবচেয়ে অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার একটি এলাকা। এখান থেকে ওপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ও দুর্গাপাশা ইউনিয়নের ৬০ হাজার মানুষের চলাচল। আবার বাউফল ও চরমোনতাজের মানুষও এ পথে চলাচল করছে। প্রায় লাখো মানুষের যাতায়াত এই ডিসি রোডের যেমন বেহাল দশা, একইভাবে বেহাল অবস্থা আমাদের গ্রামবাসীর।

স্বপন বলেন, হঠাৎ করে খেয়াঘাটের ইজারা বাড়িয়ে এখন ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা হয়েছে।বালুমহল ইজারা দিয়ে গ্রামবাসীকে বিপদে ফেলে দিয়েছে প্রশাসন। আবার ইটভাটার ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ আমলে নেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বিএনপি নেতা শাহ আলম বলেন, নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। কারখানা নদীর ডিসি রোড ও দক্ষিণ শিয়ালঘুনির চর থেকে যাতে কেউ বালু উত্তোলন না করতে পারে, সে জন্য জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
ছাত্রদল নেতা আরাফাত রহমান বলেন, রোকনপুর ইজারা হলেও এলোপাথাড়িভাবে বালু কাটা হয়। এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ।

ডিসি রোড ধরে পূর্বে দুধল ইউনিয়নের হতরাজ বাজার ও পশ্চিম কবাই ইউনিয়নের ইটখোলা বাজার পর্যন্ত এলাকাজুড়ে বিশাল চর জেগে উঠেছে। আর এই চর থেকে মাটি কেটে নেওয়া ও বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে একটি অসাধু প্রভাবশালী মহল। তারা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে এসব প্রতারণা করছে বলে জানালেন একাধিক গ্রামবাসী। হঠাৎ করে ডিসি রোড ও বাহেরচর খেয়াঘাটের পারাপার ২০ টাকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। খেয়াঘাটে কাকরদা স্কুলের শিক্ষক হিরুন্নেছা চাপরাশি বলেন, ডিসি রোড থেকে ডিসির হাট বা কাঁকরদা খেয়া পারাপার আগে ছিলো দশ টাকা, ঈদের পর থেকে ২০ টাকা করে নিচ্ছে। আবার মাঝখানে কয়েকদিন ১৫ টাকা করে নিয়েছে। এতে করে আমাদের প্রতিদিনের যাত্রীদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ইটখোলা বাজারের ব্যবসায়ী স্বপন খানের অভিযোগ বালু উত্তোলন নিয়ে। তিনি বলেন, ওপারে ২৫টি ইটভাটা আর এপারে দুটি ইটভাটার প্রায় আট-দশটি ড্রেজার নতুন জেগে ওঠা চরে এসে মাটি কাটে। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে বালুমহল ইজারা নেওয়া একটি গ্রুপ। এজন্য গত সোমবার আমরা মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে এসেছি।

এ বিষয়গুলো তুলে ধরে ও ছবি পাঠিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, খেয়াঘাটে ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই একবার এদের জরিমানা করা হয়েছে। আবারও যদি তারা এটা করে তাহলে এদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া কারখানা নদী থেকে কাউকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবেনা। কারখানা নদীর যে জায়গায় ইজারা দেয়া হয়েছে, সেখান থেকে বালু কাটার ফলে যদি নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের ক্ষতি হয়, তাহলে সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকেন, তা হলে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালিত হবে এবং প্রয়োজনে সব ইজারা বাতিলের সুপারিশ করা হবে।