ঢাকাবুধবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের উদ্যোগে শী*র্ষ*ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
এপ্রিল ৩০, ২০২৫ ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামবিদ্বেষী ও জনবিচ্ছিন্ন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান।

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের উদ্যোগে আজ বুধবার সকাল ৯টায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে “নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী ও আলেমসমাজ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকার পতিত স্বৈরাচারের জঞ্জাল পরিষ্কারের লক্ষ্যে যে সামগ্রিক সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা জনসমর্থনপুষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিলো বটে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতো কিছু কমিশন জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। কিন্তু নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।

 

বক্তারা বলেন, এই কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশ এমন, যা পশ্চিমা মতবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারীসমাজের প্রকৃত চাহিদা ও জীবনসংগ্রামের সম্পূর্ণ বিপরীত। নারীপাচার, যৌন নিপীড়ন ও দারিদ্র্যজনিত কারণে যারা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসন ও সমাজে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করার কথা থাকলেও কমিশন বরং এই ব্যাধিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারীর জন্য অভিশপ্ত জীবনকে আইনি বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা করেছে।

বাংলাদেশের পারিবারিক আইন বহুদিন ধরে ধর্মভিত্তিক। যেমন মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু পারিবারিক আইন, খ্রিস্টান পারিবারিক আইন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং ভারতের মতো বহু দেশেই প্রচলিত। এই আইনের মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয় এবং তা নিয়ে কোনো বড় অসন্তোষও সমাজে নেই। অথচ নারী কমিশন এই ধর্মীয় ভিত্তিকে বাতিল করে নতুন আইনের নামে ধর্মহীন পরিবার কাঠামো চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা ধর্মবিশ্বাসী জনগণকে উত্তেজিত করে ভারতের বিজেপির সাম্প্রতিক সামাজিক বিভাজনের কৌশলের অনুকরণ করছে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, নারীর জন্য কল্যাণকর প্রস্তাবনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, তাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও পারিবারিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। অথচ কমিশন যে ভাষায় ও যুক্তিতে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, তা পশ্চিমা দর্শনেরই বিকৃত প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের নারীরা এই ধরনের ভাষা ও মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে না। বক্তাগণ প্রশ্ন করেন, সরকার যে নারীদের কল্যাণে কমিশন গঠন করেছে, সেখানে কীভাবে সবাই একমুখী, ইসলামবিরোধী এবং পাশ্চাত্য চিন্তায় প্রভাবিত হলো?

সেমিনারে বক্তাগণ বলেন, এই প্রস্তাব জনরোষ উস্কে দেবে এবং এর সুযোগ নিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। একটি গণ-আন্দোলননির্ভর সরকারকে এই ধরণের বিভ্রান্তিকর কমিশন বিপদে ফেলবে। সেমিনারে আলোচকগণ এই কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে কমিশন বাতিলের দাবি জানান এবং দেশের নারীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী দীনদার, শিক্ষিত ও সমাজসচেতন নারীদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান।

সেমিনারে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ পেশ করা হয়
১. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
২. কমিশন সরকারিভাবে বাতিল করতে হবে।
৩. নতুন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে দীনদার, শিক্ষিত, দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. পরিবার ও নারী বিষয়ে প্রস্তাবের ভিত্তি হতে হবে কুরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতা।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন:
মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ; ডা. শফিকুর রহমান, আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি; মাওলানা মামুনুল হক, আমীর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস; মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ; মুজিবুর রহমান মঞ্জু, চেয়ারম্যান, এবি পার্টি; ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মহাসচিব, খেলাফত মজলিস; মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মহাসচিব, ইসলামী ঐক্যজোট; নুরুল হক নুর, সভাপতি, গণ অধিকার পরিষদ; ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ; যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান; মাওলানা আশরাফ মাহদি, যুগ্ম আহ্বায়ক, এনসিপি; জনপ্রিয় ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, মাওলানা রুহুল আমীন সাদি (সাইমুম সাদী); মুফতি সাকিবুল ইসলাম কাসেমি, মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস, জামেয়া ইসলামিয়া কুতুবখালি; আরিফুল ইসলাম অপু, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মুফতি আবু মুহাম্মাদ রাহমানি হাফি, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও তর্কবিদ; মুফতী লুতফুর রহমান ফারায়েজি, শরিয়াহ বিষয়ক সম্পাদক; হাফেজ আব্দুল বাসিত আল হাসসানি, খলীফা, পীর জুল্ফিকার নকশবন্দি; হাজী শরিয়তুল্লাহর সপ্তম পুরুষ, মাওলানা হানজালা; আদ-দাওয়া ইলা-ল্লাহ দাওয়াহ সেন্টারের পরিচালক, শায়খ আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক হাফি; জনাব নুরুল ইসলাম বুলবুল, সভাপতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ; সুলতানুল ওয়ায়েজীন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী; মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম, পরিচালক, আইএফএ কনসালটেন্সি লি.

সভাপতিত্ব করেন মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি, সভাপতি, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ;