
নিউজ ডেস্ক :: ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারী সংগঠনগুলো আজ সোমবারও সচিবালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। পরে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছে স্মারকলিপি দেন বিক্ষোভরতরা।
সোমবার ১২টার পর দুই উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি নিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। তবে দুই উপদেষ্টার কেউই তখন উপস্থিত ছিলেন না। পরে আসিফ মাহমুদের পিআরও ও মাহফুজ আলমের পিএস দুই উপদেষ্টার পক্ষ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
এর আগে, এদিন বেলা ১১টা থেকে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। সচিবালয় কর্মকর্তা–কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ডাকে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। তারা বলেন, ‘অবৈধ কালো আইন বাতিল কর করতে হবে’, ‘অবৈধ কালো আইন মানি না মানব না’।
এর আগে গতকাল রোববারও সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। সেদিন সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবিতে তারা মিছিল নিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা আর ইমাম মজুমদারকে স্মারকলিপি দিতে যান।
গত ২৯ মে সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম এ কর্মসূচির কথা জানান।
নুরুল ইসলাম বলেন, আলোচনা যাই হোক, আমাদের একটা টাইম ফ্রেম থাকতে হবে। আমরা তো আজীবন অপেক্ষায় থাকব না। ঈদের আগে আমাদের হাতে সময় আছে চার দিন। প্রধান উপদেষ্টা শনিবার দেশে ফেরার কথা শুনেছি। সেক্ষেত্রে রোববার আমাদের আশাব্যঞ্জক একটি খবর পাওয়ার কথা। তারপরও আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাইনি, সরে যাব না।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের এ নেতা বলেন, অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারলে এরপর অভিন্ন নীতিমালা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। আশা করি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সচিবরা প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে আলোচনা করে একটি ভালো সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা সেই প্রত্যাশায় থাকব।
তিনি বলেন, চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে রোববার উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। সোমবার স্মারকলিপি দেওয়া হবে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে।
অন্যদিকে মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা প্রধানদের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বলেন, রোববার আমরা ইতিবাচক খবর পেলে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে, একটা ভালো ফলাফল নিয়ে ঈদটা উদযাপন করবো। চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এমন বিধান রেখে রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করা হয়।
এর আগে ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদনের পর গত শনিবার (২৪ মে) থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। এরপর সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব সংগঠন সম্মিলিতভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।
তারা এ অধ্যাদেশকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে অবহিত করছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদসহ কয়েকজন সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা।
বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, কর্মচারীদের ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরলে তাকে জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
বুধবার কর্মচারী নেতারা ঘোষণা দেন, বৃহস্পতিবার থেকে সচিবালয়সহ সারাদেশে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন সরকারি কর্মচারীরা।