নিউজ ডেস্ক :: নৌকার মাঝি হতে চলছে ঘাটে ঘাটে তদবির
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা। দলের টিকিট নিশ্চিত করতে এখন শেষ সময়ের দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত বর্তমান সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতাসহ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলীয় কার্যালয়ে আবেদন জমা দেওয়ার পর থেকেই আশীর্বাদ নিতে সিনিয়র নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণে চলছে নানামুখী চেষ্টা।
জানা গেছে, দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য, তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা, ব্যবসায়ী আমলাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারাও আবেদন করেছেন। সব মিলিয়ে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৩ হাজার ৩৬২ জন নৌকা প্রতীক পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারবেন—এমন প্রার্থীকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। মুখ দেখে নয়, জয়ী হওয়ার সক্ষমতা আছে—এমন নেতারাই মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে আগেই বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটারদের মধ্যে চালানো হয়েছে জরিপ। এসব প্রতিবেদন ও দলের একটি বিশেষ সেলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে।এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই দলীয় প্রার্থিতা ঠিক করা হবে। আওয়ামী লীগে সব সময়ই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা করা হয়। জনমত জরিপ, সরকারি জরিপ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব একটা সেল আছে। সব মিলিয়ে যার নম্বর বেশি, তাকেই মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়। সব দিক বিবেচনা করে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
রাজনীতিক ছাড়াও এবার বিভিন্ন পেশার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দলীয় আদর্শের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাবিহীন কেউ যেন মনোনয়ন পেয়ে না যান, সেজন্য আবেদনপত্রে অতীতে আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের তিনটি পদে দায়িত্ব পালনের তথ্য উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। তবে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই একাধিক আসনের জন্য আবেদন করেছেন। এমনকি একই আসনে একই পরিবারের একাধিক সদস্যও আবেদন করেছেন। তবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজনের আসনে কেউ মনোনয়ন চাননি। এমন আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে আরও আছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন ও শেখ তন্ময়।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ছাড়াও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের বাসা ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীর ভিড় বেড়েছে। এ ছাড়া দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে নিজের পক্ষে তদবির করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বাদ যাচ্ছেন না দলের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও। নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য অনেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনেও হাজির হচ্ছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাসা ও কার্যালয়েও অনেকে ভিড় করছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জেবুন্নেছা হক কালবেলাকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করতে তো বাধা নেই। অনেকেই মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করবেন। তবে দল যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকেই নৌকার প্রার্থী করবে। এক্ষেত্রে প্রার্থীর নানাবিধ যোগ্যতা বিবেচনা করেই দেওয়া হবে।’
সূত্র আরও জানায়, বিএনপি ও তার মিত্রদের অনেকে নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা কম থাকায় এবং দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকের ইমেজ সংকট থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই জয় অনেকটা নিশ্চিত—এমনটাও মনে করছেন মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা। তা ছাড়া নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এবার দলীয় হাইকমান্ড অনেকটাই নমনীয় থাকবে বলেও ধারণা অনেক প্রার্থীর। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকতেও কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের সংসদীয় আসনগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এরপর মনোনয়ন বোর্ডের মুলতবি বৈঠকে অন্য বিভাগগুলোর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলীয় প্রার্থিতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন শেখ হাসিনা। মনোনয়ন বোর্ড বিশ্লেষণ করে যাকে যোগ্য মনে করবে তার পক্ষেই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।’
গত শনি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলেছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের কার্যক্রম। এবারই প্রথম অনলাইনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।