ঢাকাবুধবার , ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দক্ষিণাঞ্চলের গর্ব পায়রা সেতু তার নান্দনিক সৌন্দর্য হারাতে বসেছে, দর্শনার্থীদের মধ্যে হতাশা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫ ৭:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দক্ষিণাঞ্চলের গর্ব পায়রা সেতু তার নান্দনিক সৌন্দর্য হারাতে বসেছে, দর্শনার্থীদের মধ্যে হতাশা।

দক্ষিণাঞ্চলের গর্ব পায়রা সেতু তার নান্দনিক সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। নিরাপত্তার নামে সেতুটির দুই পাশে উঁচু কংক্রিটের প্রাচীরের ওপর লাগানো হয়েছে লোহার গ্রিল, যা দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি করেছে হতাশা। অনেকের মতে, এটি এখন দেখতে ‘লোহার খাঁচায় বন্দি এক শিল্পকর্ম’-এর মতো।

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

চার লেনের এই স্থাপনাটি দ্রুতই হয়ে ওঠে একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। বিশেষ করে সন্ধ্যা ও ছুটির দিনে হাজারো মানুষ এখানে ভিড় জমায় নদীর দৃশ্য উপভোগ করতে এবং সেলফি তুলতে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি চালু হওয়ার পর থেকে এখানে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগ ‘নিরাপত্তাজনিত কারণ’ দেখিয়ে সেতুর দুই পাশে লোহার গ্রিল বসানো শুরু করেছে।

বরিশাল অংশের ৪৬৩ মিটার এরইমধ্যে এই গ্রিল বসানো হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে ‘তড়িঘড়ি’ ও ‘অপর্যাপ্ত চিন্তাভাবনা’ হিসেবে দেখছেন অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞ। বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্থপতি মো. সাইদুর রহমান বলেন, “ডিজাইনের সঙ্গে মানানসই কোনো বিকল্প কাঠামো তৈরি করা যেত, যা সেতুর সৌন্দর্য অটুট রাখত।”

গ্রিল বসানোর সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতির ওপর।

সেতুর দুই পাড়ে গড়ে ওঠা চা-নাস্তার দোকান, ফুচকা ও নারকেল পানির বিক্রেতারা ইতিমধ্যে বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। দর্শনার্থীরাও এখন আগের মতো বেশি সময় থাকছেন না।
কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, “আগে মনে হতো আকাশের নিচে নদীর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। এখন মনে হয় যেন কারাগারের ভেতর থেকে ছবি তুলছি।”

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ নিরাপত্তার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “তরুণদের কেউ কেউ ছবি তুলতে গিয়ে সেতুর মাঝ বরাবর চলে আসেন, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।

” তবে তিনি এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই গ্রিল বসানো হচ্ছে। তবে সেতুর অবশিষ্ট এক হাজার মিটার অংশে কবে নাগাদ গ্রিল বসানো হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

স্থানীয় শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, “এটা শুধু একটা সেতু নয়, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। নিরাপত্তা যেমন দরকার, তেমনি সৌন্দর্যেরও মর্যাদা আছে।”