ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে চার শতাব্দী পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে নতুন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে হারানো জৌলুস ও ঐতিহ্য

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
অক্টোবর ৯, ২০২৫ ১০:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ফিরে পাচ্ছে তার হারানো জৌলুস ও গৌরব। প্রায় চার শতাব্দী পুরনো এই স্থাপনা এক সময় ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় থাকলেও, সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয়েছে এর সংরক্ষণ ও সংস্কারকাজ। ঐতিহাসিকভাবে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশালের প্রাচীনতম রাজবাড়িগুলোর একটি।

 

ধারণা করা হয়, ১৭ শতকের প্রথম দিকে জমিদার রূপচন্দ্র রায় এটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তাঁর নাতি রাজচন্দ্র রায়ের আমলে জমিদারির প্রভাব বিস্তার লাভ করে এবং স্থাপত্যে আসে নতুন মাত্রা। সে সময় লাকুটিয়া এলাকা হয়ে ওঠে বরিশালের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। ইতিহাসবিদদের মতে, জমিদারবাড়ির আশপাশে ছিল বিশাল পুকুর, মঠ, অতিথিশালা ও সুরম্য বাগান। এ ছাড়া বরিশাল শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য জমিদাররাই প্রথম লাকুটিয়া থেকে বরিশাল পর্যন্ত কাঁচা সড়ক নির্মাণ করেন, যা পরবর্তীতে জেলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রথম ধাপে ৬০ লাখ টাকার বাজেটে ভবনের ভিত্তি মেরামত, দেয়ালের ইটের গাঁথুনি দৃঢ়করণ ও ছাদ পুনর্নির্মাণের কাজ করছে।

 

 

দ্বিতীয় ধাপে প্রাচীন স্থাপত্যের আসল রূপ অক্ষুণ্ণ রেখে দরজা-জানালা, মেঝে, কাঠের কারুকাজ ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থার পুনর্গঠন করা হবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, “আমরা ঐতিহ্যের স্বকীয়তা নষ্ট না করে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির আসল রূপ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এটি সংস্কার শেষ হলে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

 

 

” অন্যদিকে স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা এই স্থাপনাটি একসময় পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে। সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় এখন এলাকাবাসীর মাঝে নতুন আশা জেগেছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের জানান, “লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি শুধু অতীতের নিদর্শন নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

 

 

সংস্কার শেষে এখানে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা, দিকনির্দেশনা বোর্ড, বিশ্রামাগার ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে।” সংস্কার শেষে লাকুটিয়া জমিদার বাড়িকে ঘিরে নতুনভাবে গ্রামীণ পর্যটন, স্থানীয় হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বিকশিত হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা।

 

 

সংস্কৃতি বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, “একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা শুধু অতীতের স্মৃতি নয়; এটি বর্তমান প্রজন্মের সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিফলন। লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির পুনর্জাগরণ বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠবে।”