
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল সদর উপজেলার চর গিলে খাচ্ছে মামুন-রুবেল বাহিনী! হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়ীয়া ও লামছড়ী মৌজাসহ গিলাতলী ও পসুরিকাঠী এলাকায় সরকারি নদী, খাল ও খাসজমি দখল করে ভাড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও চরমোনাইর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বর) সৈয়দ শীষ মো. মামুন, সদর উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল হাওলাদার (লামছড়ী এলাকার) ও একই এলাকার বাবুল খান দীর্ঘদিন ধরে এসব সরকারি সম্পত্তি দখলে রেখে অবৈধভাবে অন্যদের কাছে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন।
সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী- চরবাড়ীয়া মৌজার জে.এল. নং ৪১, খতিয়ান নং ১, দাগ নং ৩৬১৯ ও ৩৮৪২ নদী সিকিস্তি হিসেবে সরকারি সম্পত্তি। লামছড়ী মৌজার জে.এল. নং ৭২, খতিয়ান নং ১, দাগ নং ৫৩৩৩ এটিও নদী সিকিস্তি জমি। গিলাতলী, পসুরিকাঠী ও পশ্চিম চরমোনাই মৌজায়ও রয়েছে কয়েক একর খাস জমি। এই সরকারি জমিগুলোর প্রাকৃতিক খাল ও জলাশয় ভরাট করে প্রায় ১৫০ একর জায়গা ব্যক্তিগতভাবে দখল ও লিজ (ভাড়া) দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন প্রভাবশালী ব্যক্তি যৌথভাবে প্রতি ২০ শতাংশ জমি ৬ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে আসছেন। এতে করে আনুমানিক ১৫০ একর জায়গায় ভাড়ার হিসেব করলে অর্ধকোটি টাকার বেশি অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব জমি ভাড়া নিয়েছেন পোর্ট রোড এলাকার ‘মায়ের দোয়া’ ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর মো. হালিম, রাঙ্গাবালীর বাসিন্দা মো. অলিউল্লাহ এবং আরও একজন ভোলার বাসিন্দা ব্যবসায়ীসহ একাধিক ব্যক্তি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এসব সরকারি জমি দখল করতে গিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ খালও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, ফলে এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি (খাস জমি) ও নদী দখল সম্পূর্ণ বেআইনি। “রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩” (পূর্বে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল) অনুযায়ী- সরকারি খাসজমি বা নদী সিকিস্তি জমি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন কর্তৃক অনুমতি ছাড়া দখল, ভাড়া, বিক্রি বা হস্তান্তর করা দণ্ডনীয় অপরাধ। দণ্ডবিধির ৪৩০ ও ৪৩১ ধারা অনুযায়ী, খাল বা জলাশয় ইচ্ছাকৃতভাবে ভরাট বা বাধা দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যার শাস্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও হস্তান্তর নীতিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী নদী সিকিস্তি জমি ব্যক্তিগত লিজ দেয়া নিষিদ্ধ।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চরমোনাই ইউনিয়নের সদস্য মামুন মেম্বর বলেন, এখানে কোনো খাস জমি নেই। যা ভাড়া দিয়েছি সব রেকর্ডি জমি। আমিতো কোনো খাল ছোখে দেখিনি। লামছড়ীর কৃষক নেতা মো. রুবেল হাওলাদার বলেন, আমাদের এখানে কোনো খাস জমি নেই। আমি রেকর্ডি জমি লিজ নিয়ে ভাড়া দিয়েছি। অন্য অভিযুক্ত বাবুল খান বলেন, আমার পৈত্তিক সম্পত্তি ভাড়া দিয়েছি।
বরিশাল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম বলেন, “সরকারি নদী সিকিস্তি জমি কেউ ভাড়া দিতে বা ভরাট করতে পারেন না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দখলমুক্ত করা হবে।” স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিক এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।


