
মো: আম্মার হোসেন আম্মান :: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ফুটওভার ব্রিজের দাবি, শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার, দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
বরিশাল–পটুয়াখালী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রতিদিনই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে তাদের। দ্রুতগামী যানবাহনের চাপে দুর্ঘটনা যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
একের পর এক দুর্ঘটনা
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূরে তাবাসসুম লামিয়া। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা।
এর আগে ৬ অক্টোবর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় আহত হন। অজ্ঞান অবস্থায় দুই ঘণ্টা সড়কের পাশে পড়ে থাকার পর তাকে উদ্ধার করে শেরে-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও আগে, ২৩ অক্টোবর মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা শান্তা একই স্থানে দুর্ঘটনায় আহত হন। দ্রুতগতির মোটরসাইকেল তার পায়ে ধাক্কা দিলে পা ভেঙে যায়। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে।
প্রশাসনের আবেদন ও উদ্যোগহীনতা
দুর্ঘটনাগুলোর পর ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরিশাল জোনের সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের কাছে একটি ফুটওভার ব্রিজ এবং তিনটি ফটকের সামনে গতিরোধক স্থাপনের আবেদন করে। কিন্তু অর্ধবছর পেরিয়ে গেলেও তাতে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেন,
“আমরা সওজের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে ব্রিজের ঢালের কারণে গতিরোধক দিলে উল্টো দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে ফুটওভার ব্রিজের দাবি অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীদেরও সচেতন থেকে রাস্তা পার হতে হবে।”
অন্যদিকে, সওজ বরিশাল জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান,
“জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আবেদন আমরা পেয়েছি। তিনটি ফটকের মধ্যে দুটি স্থানে গতিরোধক রয়েছে, সম্প্রতি সেগুলোর রঙ করা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও দাবি
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন ছাড়া এ দুর্ঘটনার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর গোড়ায় অবস্থিত হওয়ায় ব্রিজের ঢাল ও বাকের কারণে গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দ্রুতগতিতে চলে আসে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী বিপ্লব বলেন,
“প্রতিদিন আমাদের এই রাস্তাটা পার হতে হয়। গাড়ির গতি এত বেশি যে, সামান্য ভুলেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই—একটি ফুটওভার ব্রিজ ও পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা জরুরি।”
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাবেয়া বলেন,
“গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে আসে, মেয়েরা বেশি ভুক্তভোগী। এখন পর্যন্ত যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বেশিরভাগ শিকার মেয়েরা। প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি
দুর্ঘটনা কমাতে জেব্রা ক্রসিং আঁকা হলেও শিক্ষার্থীদের মতে, তা কার্যত কোনো কাজে আসছে না। তারা বলছেন,
“ফুটওভার ব্রিজ ছাড়া এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রশাসন এখনই পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা অনিবার্য।”


