
নিজস্ব প্রতিবেদক :: রাশিয়া থেকে দুবাইতে উড়ে এসে প্রাক্তনকে খুন।
আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে খ্যাত দুবাইয়ের একটি হোটেলে প্রাক্তন স্ত্রীকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যার দায়ে এক রুশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহে এবং স্ত্রী ‘এসকর্ট’ হিসেবে কাজ করেন- এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি রাশিয়া থেকে প্রায় ২,৭০০ মাইল পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে এসে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
দুবাইয়ের বিলাসবহুল ‘ভোকো বোনিংটন’ হোটেলে ২৫ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া নামে এক রুশ বিমানবালা খুন হলে অভিযোগের তীর উঠে প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ৪১ বছর বয়সী আলবার্ট মর্গান পেশায় আইনি পরামর্শদাতা। সন্দেহ ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তিনি রাশিয়া থেকে উড়ে এসে এই খুন করেন।
তদন্তকারীদের তথ্য অনুযায়ী, আলবার্ট মর্গান অত্যন্ত সুকৌশলে হোটেলের লন্ড্রি থেকে একটি বাথরোব সংগ্রহ করে তা পরিধান করেন এবং নিজেকে হোটেলের অতিথি হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর তিনি একজন রুম মেইডকে প্রলুব্ধ করে আনাস্তাসিয়ার রুমে প্রবেশাধিকার পান।
02
রুমে ঢোকার পর দুজনের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে আলবার্ট তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে আনাস্তাসিয়াকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গেছে, আনাস্তাসিয়ার ঘাড়, ধড় এবং হাত-পায়ে অন্তত ১৫টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর হোটেল কক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আনাস্তাসিয়া রাশিয়ার ‘পোবেদা’ এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। দু’বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের পর তাদের বিচ্ছেদ হয়।
আলবার্টের দাবি, বিচ্ছেদের পর তিনি আনাস্তাসিয়ার ব্যক্তিগত বার্তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, বিয়ের সময়েই আনাস্তাসিয়া গোপনে ‘হাই-এন্ড এসকর্ট’ হিসেবে কাজ করতেন। মূলত এই ক্ষোভ থেকেই তিনি আনাস্তাসিয়াকে শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলবার্ট জানান, তার উদ্দেশ্য ছিল আনাস্তাসিয়ার গায়ে সবুজ রঙ ঢেলে দেয়া এবং কাঁচি দিয়ে চুল কেটে দেয়া, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় তিনি তাকে হত্যা করেন।
হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আলবার্ট দ্রুত রাশিয়ায় ফিরে যান। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুবাই পুলিশ তাকে শনাক্ত করে এবং রুশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর আলবার্ট সাজার হাত থেকে বাঁচতে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আবেদন করেন।
উল্লেখ্য, রাশিয়ায় অনেক অপরাধী কারাদণ্ড এড়াতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ খোঁজেন। তবে আলবার্টের ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা সফল হয়নি।
জানা গেছে, আলবার্ট মর্গান এর আগে মাদক সংক্রান্ত অপরাধে সাত বছর জেল খেটেছেন। তাদের বৈবাহিক জীবনেও আগে কয়েকবার কলহ ও ঘরোয়া সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, যদিও আনাস্তাসিয়া পরে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
বর্তমানে রুশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং আদালত তাকে দুই মাসের রিমান্ডে পাঠিয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত এখনও চলছে।


