নিজস্ব প্রতিবেদক :: কুয়াকাটা সৈকতে চরজুড়ে মৃত জেলিফিশ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের বিভিন্ন চরে হঠাৎ ভেসে আসছে সাদা জেলিফিশ। এসব জেলিফিশ সৈকতে মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আবার সাগরে মাছ শিকারের জন্য রাখা জালেও ঝাঁকে ঝাঁকে জেলিফিশ আটকে থাকায় জেলেরা মাছ যেমন পাচ্ছেন না। অনেক জেলে বাধ্য হয়ে সমুদ্র থেকে জাল উঠিয়ে নিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাগর অতিরিক্ত লবনাক্ত হওয়ায় জেলিফিশ ভেসে আসছে। তা ছাড়া কচ্ছপের প্রধান খাবার হচ্ছে জেলিফিশ। সাগরে কচ্ছপ কমে যাওয়ায় জেলিফিশের পরিমাণ বেড়েছে। সৈকতে ভেসে আসা জেলিফিশের মধ্যে কোনোটা আকারে ছোট, কোনোটা বড়। দেখতে অনেকটা অক্টোপাসের মতো। সৈকতে এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় গোটা সৈকতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
সৈকতের লেম্বুরবন এলাকার জেলে আ. করিম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ জেলিফিশ উৎপাত বাড়ছে। প্রথম দিকে কম থাকলেও এখন পরিমাণ অনেক বেশি। সাগরে জালে কোনো মাছ ধরা পড়ছে না জেলিফিশের কারণে। পুরো জাল আটকে থাকে জেলিফিশে। এ অবস্থায় জাল, রশি নষ্ট করে জাল তুলে নিয়ে আসছেন অনেকে। জেলিফিশ কমলে আবার তারা জাল দেবেন।প্রতি বছরই এ সময়ে নোনাগুলো (জেলিফিশ) সাগরে দেখা যায় জানিয়ে পান্জুপাড়ার জেলে মোহাম্মদ বাচ্চু বলেন, ১৫০ হাত জালে ১৫০-২০০ জেলিফিশ আটকা পড়ে। এতে জাল ছিঁড়ে যাওয়ায় তারা জাল তুলে নিয়েছেন। এগুলো শরীরে লাগলে চুলকায়। চোখ লাল হয়ে যায়।ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ায় জেলিফিশ ভেসে আসছে। তা ছাড়া কচ্ছপের মূল খাবার জেলিফিশ, কিন্তু সাগরে কচ্ছপ নেই বললেই চলে। বর্তমানে অনেক বেশি জেলিফিশ সাগরে ভেসে আসায় জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না। আবার জালে অনেক বেশি জেলিফিশ আটকা পড়ায় ওজনের কারণে জালও তোলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জেলেরা জাল কেটে দিয়ে চলে আসছেন। ফলে এটি আরও ক্ষতিকর। সারাবছর ভৌতিক মাছ এই জালে আটকে মারা পড়ে। তাই জেলেদের এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ সমস্যা কেটে যাবে মন্তব্য করে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, পুরো বিষয়টা প্রাকৃতিক। জেলিফিশের প্রধান খাবার ডিম ও মাছের বাচ্চা। এ কারণে এগুলো বেশিরভাগ সময়ে খাবারের সংকট দেখা দিলে তীরে চলে আসে, তখন ভাটায় তীরে আটকে মারা পড়ে।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলিফিশের মাথা, হৃদপিণ্ড, লেজ, মেরুদণ্ড বা হাত-পা বলে কিছু নেই। এটি সমুদ্রের এক আজব প্রাণি। প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের এই প্রাণিকে বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের যুগের প্রাণি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। প্রতি বছরের মার্চের শুরুতে বা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উপকুলে ‘সাদা জেলিফিশ’ দেখা যায়। এ বছরও গত এক সপ্তাহ ধরে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য মরা জেলিফিশ বালুতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফাইলোরিজা পাঙটাটা।