ঢাকাশনিবার , ৯ নভেম্বর ২০২৪

বরিশালে ঠিকাদারের অবহেলায় স্থ*বির ২৬ সেতুর নির্মাণ কাজ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ৯, ২০২৪ ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে ঠিকাদারের অবহেলায় স্থবির ২৬ সেতুর নির্মাণ কাজ, জনদুর্ভোগ চরমে।

ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতা, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্মাণাধীন ২৬টি সেতুর কাজ বরগুনায় ৫ বছর ধরে স্থবির অবস্থায় পড়ে আছে। এসব সেতুর নির্মাণব্যয় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

কোথাও কোথাও আংশিক কাজ করে লাপাত্তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ফলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। আর এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডির আওতায় নির্মাণ শুরু হওয়া ২৬টি সেতুর কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১১টি, আমতলী উপজেলায় ৭টি, বেতাগী উপজেলায় ৫টি এবং তালতলী, পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলায় একটি করে। এসব সেতুর কাজ শুরুর পর থেকে এক বছরের মধ্যে হস্তান্তরের নিয়ম থাকলেও ৫ বছরেও তা হস্তান্তর হয়নি।

কবে নাগাদে এসব কাজ শেষ হবে তারও কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ফলে স্থানীয়দের চলাচলে এখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নির্মাণাধীন ২৬টি সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭০ টাকা। জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালের সোনাখালী এলাকায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার সেতুর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি।

কাজ শেষে নিয়মানুযায়ী সেতু হস্তান্তর করার কথা ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারির মধ্যে। এরপর কাজের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলেও বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলজিইডি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সেতুর কাজ সমাপ্ত হয়েছে ৭০ ভাগ।

যার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস। এদিকে নির্ধারিত সময়ে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বললেও আর তাকে পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা জেলার আমতলী-তালতলী সড়কের আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারসংলগ্ন খালে পৌনে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬০ মিটার গার্ডার সেতুর কাজ। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৬০ ভাগ।

অথচ এই সড়কটি জেলা শহরসহ আমতলী-তালতলী দুই উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়ক। তাছাড়া প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী পরিবহনসহ অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ছগির হোসেন বলেন, একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে।

তবে বর্তমানের কাজ চলমান আছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। একই ঠিকাদার সদর উপজেলায় আরো ৮টি সেতুর কাজ করছেন। যার মধ্যে ৬টির কাজ শেষ হয়েছে ৯০ ভাগ এবং দুটির কাজ শেষ হয়েছে ৬০-৬৫ ভাগ। বাকি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় নির্মাণাধীন সেতুগুলো দিয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. ছগির হোসেন বলেন, ৯০ ভাগ শেষ হওয়া ৬টি সেতুর সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সেগুলো অনুমোদন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। বাকি দুটি সেতুর কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও তিনি জানান। সদর উপজেলার কালিরতবক ভায়া গোলবুনিয়া খেয়াঘাটসংলগ্ন খালে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৬ মিটার সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, যা শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ৪ মে। কিন্তু এখনো সেতুর পুর্ণাঙ্গ কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে স্থানীয়রা।

আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়ি খালে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭ মিটার গার্ডার সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর। কিন্তু কাজ শেষের মেয়াদের চার বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৬৫ ভাগ।

এ কাজের ঠিকাদার হলেন- হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম মৃধা। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর লাপাত্তা শহীদ। বন্ধ রয়েছে মোবাইল ফোন। এভাবে কাজ স্থবির হয়ে আছে জেলার ২৬টি সেতুর।

 

ফলে স্কুল-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীসহ ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সেতুর কাজ বাস্তবায়নের দাবি স্থানীয়দের। বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়ে চূড়ান্ত নোটিস দেয়া হয়েছে। অন্যথায় চুক্তি বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।