নিজস্ব প্রতিবেদক :: বেতনের বাইরে সাংবাদিক মুন্নী সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা ১৩৪ কোটি টাকা।
সাংবাদিক মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে গত কয়েক বছরে বেতনের বাইরে ১৩৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পর পরই ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিধিবহির্ভূত লেনদেনের অভিযোগে মুন্নী সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইতোমধ্যে জব্দ করেছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। স্থগিত করা হিসাবে এখন স্থিতি আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা।
মুন্নী সাহা, তার স্বামী কবির হোসেন তাপস এবং তাদের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের হিসাবে এই অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
জানা গেছে, মুন্নীর সাহার অর্থের বেশিরভাগই লেনদেন হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে। এছাড়া আরও ১৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন হয়েছে।
আলোচিত ব্যাংক হিসাবটি বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায়। বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাবটি খুলেছেন, প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ও মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেন তাপস। হিসাবটিতে মুন্নী সাহাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
মুন্নী সাহা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু অস্বাভাবিক পরিমাণ অর্থের লেনদেনই করেননি, ঋণ নিয়ে নয়ছয় করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠানটি ওয়ান ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। ঋণ নেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই কিস্তি পরিশোধে অনিয়ম শুরু করে। দেড় বছরের মাথায় প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি হয়ে পড়ে। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নিজের প্রভাব ব্যবহার করে একাধিকবার ঋণটি পুনঃতফসিল করা হয়। ২০২২ সালে ঋণ হিসাবটি ৫ বছর মেয়াদি ঋণে পুনঃতপশিল করা করা হয়েছে।
এছাড়া, ওয়ান ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় জনৈক মাহফুজুল হকের মালিকানায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই একটি হিসাব খোলা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটি থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে বারবার সুদ মওকুফ ও নবায়ন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে কেবল ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ করা হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। যদিও প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে পারস্পারিক ব্যবসায়ীক কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বিভিন্ন তারিখে হিসাব দু’টির মধ্যে বিপুল অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছে।
ব্যাংক হিসাবের বাইরে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায় শান্তিনিকেতনে ১৬৫, রোজাগ্রীণে তার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান মিলেছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহতের মামলায় মুন্নী সাহাকে আসামি করা হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে জনতা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় তিনি ‘ভয়ে অসুস্থ’ হয়ে পড়লে পুলিশ তাকে তার পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়।