
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা মারজুকের বিরুদ্ধে এবার স্ত্রীকে নির্যাতন ও প্রাননাশের হুমকি,ভয়ে ডিভোর্সের নোটিশ স্ত্রীর।
ইত্তেহাদ নিউজ : ছাত্রনেতা, সমন্বয়ক, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ নানান পরিচয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, ডাকাতির প্রস্তুতি,ভুয়া মামলায় আসামী করার হুমকি,ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অর্থ আদায়ের ভয়ঙ্কর অভিযোগ সদ্য বিলুপ্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল জেলা কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মারজুক আব্দুল্লাহর নামে। মামলা বানিজ্য ও সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে মারজুকের যুগ্ম সদস্য সচিব পদ ২০ মে বরিশাল জেলা শাখা স্থগিত করেন।পরে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া পটুয়াখালীর দুমকি থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় মারজুকের বিরুদ্ধে গত ৬ জুন দুমকি থানায় মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া মারজুক আব্দুল্লাহ একজন নারীকে পিএস হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বেতনের টাকা না দিয়ে উল্টো প্রান নাশের হুমকী ও এসিড দিয়ে ঝলসানোর হুমকি দেয়।এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ঐ পিএস বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
মারজুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে স্ত্রী মেহেরুন্নেসার লিখিত অভিযোগ:
এবার স্বামী মারজুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে স্ত্রী মেহেরুন্নেসা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন,আমি একজন সাধারণ নারী। আমার স্বামী মারজুক আব্দুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে আমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তিনি আমাকে মারধর করেন, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন, এবং বহুবার গলা চেপে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন।
আমি জানতে পেরেছি, তিনি একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, এবং যখন আমি এর প্রতিবাদ করেছি, তখন তিনি আমাকে মারধর করে চুপ করিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তিনি আমার প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন এবং একাধিকবার বাস্তবে সে চেষ্টা করেছেনও।
আমি বহুবার নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাঁচি। কিন্তু আমার স্বামী প্রভাবশালী হওয়ায় এবং পুলিশ দিয়ে বারবার আমাকে তার কাছে জোর করে ফিরিয়ে দিয়েছে। এতে আমার জীবনের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
আমি আর এ নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না। আমি চাই, আইনের মাধ্যমে আমার ও আমার জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত হোক। আমি চাই, আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যেন আমি নিরাপদে বাঁচতে পারি এবং ভবিষ্যতে আর কোনো নারী যেন এমন নির্যাতনের শিকার না হন।
মেহেরুন্নেসা ন্যায়বিচারের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।এছাড়া তিনি লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন,আমাকে মেরে আমার সন্তান রেখে দিছে মারজুক আব্দুল্লাহ।মেহেরুন্নেসা তার সন্তান ফেরত পেতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
divors
নির্যাতন সইতে না পেরে মারজুক আব্দুল্লাহকে স্ত্রীর ডিভোর্স:
এদিকে, স্ত্রী মেহেরুন্নেসা স্বামী মারজুক আব্দুল্লাহর নির্যাতন সইতে না পেরে এবং ভরন-পোষন না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৮ আগষ্ট ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন এর ৭ (১)ধারামতে ডিভোর্সের জন্য নোটিশ প্রদান করেছেন কাজী অফিসের মাধ্যমে।
marjuk pic
মারজুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ :
মারুজুক আব্দুল্লাহর পিএস হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত এক নারীর থানায় লিখিত অভিযোগ,দুমকী থানায় ডাকাতি প্রস্তুতির পুলিশের মামলা স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ এবং সদ্য বিলুপ্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির পদ স্থগিতের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে মারজুক আব্দুল্লাহর মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরাধজগতের কাহিনি। মারজুক আব্দুল্লাহ চাঁদাবাজি ও মামলা বানিজ্য করে আদায় করেছেন কোটি কোটি টাকা।রাতারাতি হয়ে গেছেন ক্রোড়পতি।সম্প্রতি পাসপোর্ট করেছেন।টাকা পাচার করেছেন বিদেশে।যে কোন সময় পালিয়ে যেতে পারেন বিদেশে । এমন অভিযোগ করেছেন মারজুক আব্দুল্লাহর সাবেক পিএস ঐ নারী।
চাকরির প্রলোভন দিয়ে ফাঁদ:
চলতি বছরের জুন মাসে বরিশালের রুপাতলীতে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন ফেসবুকে ছড়ায়। বিজ্ঞাপনটি ছিল ২০ হাজার টাকা বেতনে একজন পার্সোনাল পিএস নিয়োগ করা হবে। চাকরিপ্রার্থী একজন নারী ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে মারজুক নিজেকে পরিচয় দেন বরিশালের “সমন্বয়ক” হিসেবে এবং দাবি করেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে তার বিশাল প্রভাব রয়েছে।
থানায় অভিযোগকারি ঐ নারী বলেন, মারজুক আব্দুল্লাহ দম্ভোক্তি করে বলেন,বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, পুলিশ কমিশনার,ওসি, পুলিশ সবাই আমাদের হাতে। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। সিটি কর্পোরেশনের বড় বড় কাজ আসছে এবং তিনি ‘কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ’ নামের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে এগুলো পাবেন। চাকরিপ্রার্থীকে অফিসে না নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কথাবার্তা চালান তিনি। এক সপ্তাহ ধরে চলা এই বৈঠকগুলোর সময় দেখা যায়, মারজুকের সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী ও অজ্ঞাত পরিচয়ের লোকজন।ঐ নারী চলতি বছরের ১৫ জুন মারজুকের পিএস হিসেবে যোগদান করেন।
একদিন একটি মিটিংয়ে মারজুকের নিয়োগ প্রাপ্ত ঐ পিএস নারী জানতে পারেন, মারজুক রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়ে টাকা দাবি করেন এবং পরে সেই মামলা থেকে হলফনামার মাধ্যমে নাম ‘কেটে দেওয়ার’ নামে আবার মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন। একেকজনের কাছে ২ লাখ, ৫ লাখ, ১০ লাখ এমনকি ২০ লাখ পর্যন্ত টাকা চাওয়া হতো।
তিনি যখন চাকরি ছাড়তে চান ও বেতন চান, তখন মারজুক হুমকি দিয়ে বলেন,তোমাকে বরিশাল শহরে পাঁচতলা বাড়ি করে দেব, কিন্তু মুখ খুললে রেহাই পাবে না। সাংবাদিক, পুলিশ, প্রশাসন সব আমাদের হাতে।এ সময় মারজুক জানান, তার সাথে আছেন সাংবাদিকরা কিছু বললে, তারা সামলে নিবেন।
ঐ নারী পিএস আরো জানান,মারজুক হুমকি দিয়ে বলেন তুমি বেশি বাড়াবাড়ি কইরো না। প্রানে মেরে ফেলবো এবং এসিড দিয়ে ঝলসে দিবো। এ ব্যাপারে ঐ নারী কোতয়ালী মডেল থানায় মারজুক আব্দুল্লাহসহ দুজনের বিরুদ্ধে ২৯ জুলাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যার নং ৩৭২৪। কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান এ এস আই জয়নাল আবেদীনকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন।
marjuk
ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় দুমকী থানায় মামলা :
সদ্য বিলুপ্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল জেলা কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মো. মারজুক আব্দুল্লাহসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। পটুয়াখালীর দুমকি থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ৬ জুন মামলাটি করেন।
দুমকি থানায় মামলা সূত্রে জানা যায়, বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের পায়রা সেতুর টোল প্লাজায় ৬ জুন তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল কিছু দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। চেকপোস্টের কাছাকাছি পৌঁছালে সামনের মোটরসাইকেল চেকপোস্টে রেখে আরোহী তিনজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় শিপন ও মামুন নামে দু’জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি, একটি ইলেকট্রিক শক ডিভাইস, একটি মোটরসাইকেল ও দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ওই দু’জন জানায়, ‘পালানো তরুণের নামক মারজুক আবদুল্লাহ। তারা পেশাদার ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, আটক দু’জনকে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক মারজুক আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ভয়ভীতি ও হুমকির অভিযোগ:
চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও মারজুক বারবার ভুক্তভোগীকে ফোন করে দেখা করতে চাপ দিতে থাকেন। এমনকি এক পর্যায়ে অচেনা নাম্বার থেকে একজন ব্যক্তি ফোন দিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন,বরিশালে থাকতে চাও? বেশি বাড়াবাড়ি কইরো না।
marjuk dakati
জনমনে আতঙ্ক ও প্রশাসনের কাছে দাবি:
মারজুকের স্ত্রী ও একজন ভুক্তভোগী পিএসের অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসা মারজুকের কর্মকাণ্ড বরিশালজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে গঠিত থানায় লিখিত অভিযোগ ও মামলাগুলোর যথাযথ তদন্ত এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
এ ব্যাপারে মারজুক আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা।