ঢাকাশুক্রবার , ১০ অক্টোবর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে হাজিপুর সেতু টোলপ্লাজায় দ্বিগুণ হারে টোল আদায়, রশিদ ছাড়াই যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
অক্টোবর ১০, ২০২৫ ৮:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল বিভাগের  পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের হাজিপুর সেতুতে সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুণ হারে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নির্ধারিত নিয়ম উপেক্ষা করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের টোল আদায়কারীরা যাত্রী, পর্যটক ও পরিবহন চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে— রশিদ ছাড়াই প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার টোল আদায় করা হচ্ছে, ফলে সরকারও হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব।

সড়কটিতে প্রতিদিন হাজারো ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। তবে বিশেষভাবে কুয়াকাটা পর্যটনগামী বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, এবং আলিপুর-মহিপুর মৎস্যবন্দরগামী ট্রাক থেকেই দ্বিগুণ টোল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় চালকরা জানান, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে জরিমানা করা হলেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুনে হাজিপুর সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব পায় বরিশালের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেলী ফিলিং স্টেশন, যা মোঃ মাহফুজ খান লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত। প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকায় তিন বছরের জন্য (মেয়াদ জুন ২০২৭ পর্যন্ত) ইজারা নেয়। এছাড়া চলতি বছরের ৮ অক্টোবর একই প্রতিষ্ঠান কলাপাড়ার আন্ধারমানিক সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব নেয় ১৫ কোটি ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকায়।

সরকারি নির্ধারিত টোলহার অনুযায়ী, মিনি ট্রাকের টোল ৭৫ টাকা, বড় বাস ১০০ টাকা, মোটরসাইকেল ৫ টাকা, মাইক্রোবাস ৪০ টাকা এবং হেভি ট্রাক ২০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে মিনি ট্রাক থেকে আদায় হচ্ছে ১৫০ টাকা, বাস থেকে ১৫০-২০০ টাকা, মোটরসাইকেল থেকে ১০ টাকা, মাইক্রোবাস থেকে ৭০-৮০ টাকা এবং হেভি ট্রাক থেকে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত।

বরগুনা থেকে আসা মিনি ট্রাক চালক জাকির হোসেন বলেন, তালিকায় ভাড়া ৭৫ টাকা, কিন্তু নিচ্ছে ১৫০ টাকা। প্রতিবাদ করলে টোলকর্মীরা খারাপ আচরণ করে।”
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোটরসাইকেল আরোহী রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সাতটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছি, মোট ৭০ টাকা দিয়েছে কিন্তু কোনো রশিদ দেয়নি। পরে জানতে পারলাম আসল টোল ৫ টাকা।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রশিদবিহীন আদায়ের কারণে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে পর্যটক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে মেসার্স বেলী ফিলিং স্টেশনের পরিচালক মোঃ মাহফুজ খান এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, আমার জানামতে বেশি টোল আদায় হয় না। যদি কেউ করে থাকে, সেটা যাচাই করে দেখা হবে।”

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জামিল আক্তার লিমন বলেন, হাজিপুর টোলের ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলছি। কেউ যদি গাড়ির নাম্বারসহ অভিযোগ দেয়, তাহলে ব্যবস্থা নেব।”

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেন, আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। অভিযোগ পেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতা ও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে টোল আদায়কারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রশিদ ছাড়া অর্থ আদায়, পর্যটকদের হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।