
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩৩ বছর পরে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ‘বরিশাল উন্নয়ন কতৃপক্ষ-বিডিএ’। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বরিশাল উন্নয়ন কতৃপক্ষ-বিডিএ’ আইনের খসড়া অনুমোদিত হয়েছে।
বরিশাল সদর আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক সিটি মেয়র মুজিবর রহমান সারোয়ার এবং বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম রাজন সহ বরিশালের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অবিলম্বে বিডিএ’র কার্যক্রম চালুরও দাবী জানিয়েছেন। মজিবর রহমান সারোয়ার আগামী ১ জানুয়ারী বরিশাল বিভাগের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই বিডিএ’র কার্যক্রম চালুর দাবী জানান। উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ২৩ নভেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে বরিশালকে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ ঘোষনা, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ, বরিশাল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজকে ক্যাডেট কলেজে রূপান্তর, বিআইডব্লিউটিএ’র সদর দপ্তর বরিশালে স্থানন্তর এবং বরিশালে ১শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন সহ আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কমিটিও গঠন করা হয় মন্ত্রী পরিষদের ওই বৈঠকে। কিন্তু সেসব কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমাদানে ব্যর্থতার পাশাপাশি ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হলে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
১৯৮১ সালে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও নানামুখি টানাপোড়েনের মধ্যে ’৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের পরে বরিশালের উন্নয়ন সংক্রান্ত মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত আরো অনিশ্চয়তার কবলে পড়ে। শুধুমাত্র শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার আমলে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে ‘বরিশাল ক্যাডেট কলেজ’ প্রতিষ্ঠা ও বরিশালে ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি গ্যাসটারবাইন পাওয়ার স্টেশন নির্মানের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। এরই আলোকে ’৮২ সালের শুরুতে প্রথম ইউনিট ও ’৮৪ সালে দ্বিতীয় ইাউনিটের কাজ শুরু হয়ে নির্ধারিত সময় শেষ হয়। ফ্রান্স সরকারের ঋণে উৎপাদন কেন্দ্র সে সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনে ব্যাপক অবদান রাখে।
তবে এরশাদ সরকারের ৯ বছরে বিভাগ প্রতিষ্ঠাসহ মন্ত্রী পরিষদের আর কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ’৯০-এর গণ-অভুত্থানে এরশাদ সরকার পতনের পর ও ৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর বরিশাল বিভাগ বাস্তবায়নের বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আসে। বরিশাল সদর আসনের এমপি আবদুর রহমান বিশ^াস প্রথমে স্পিকার ও পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার আসনটি শূন্য হয়। ৯১ সালের ডিসেম্বরে সদর আসনের উপ-নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বরিশালে এসে বিভাগ বাস্তবায়নের ঘোষনা দেন।
এমনকি এলক্ষ্যে তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ৬ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলের পরপরই নিকার-এর বৈঠকে ৬টি জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ গঠনের চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করে। পরবর্তিতে মন্ত্রী পরিষদও তা চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করে। এরই আলোকে ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারী বরিশাল বিভাগের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বরিশাল বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও বিভাগীয় সচিবালয় ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এর একবছর পরে ৪টি জেলা নিয়ে সিলেট বিভাগের কার্যক্রমও শুরু হয়।
বিভাগ প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিতায় ২০০২ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন ও ২০০৬ সালে বরিশাল মহানগর পুলিশের কার্যক্রমও শুরু হয়। এমনকি ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ই পূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি বরিশাল ও সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করে এবং মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে এ দুটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে নীতিগত সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু ২০০৬ সালের শেষে ৪ দলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর, ১/১১ সরকার গঠন পরবর্তি দু’বছরের সেনা শাসন ও সদ্য বিদায়ী মহাজোট সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে বরিশালের এক বছর পরে সিলেট বিভাগ ও সিটি করপোরেশন গঠিত হলেও ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর ‘সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এসডিএ’ গঠনের বিধান জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হবার পরে বিগত সরকারের সময়ই মাঠ পর্যায়ে কিছু কার্যক্রমও শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে এসডিএ’র জনবল কাঠামো অনুমোদন ও চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু একইসাথে বরিশাল ও সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ থাকলেও সেসময়ে বরিশালকে বাদ দিয়ে এসডিএ গঠনের বিষয়টি মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন, অনুমোদন ও জাতীয় সংসদে এর আইন অনুমোদন করা হয়েছিল।
বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩৩ বছর পরে বিডিএ গঠনে বর্তমান সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ। বর্তমানে সংসদ কার্যকর না থাকলেও প্রেসিডেন্ট’র অধ্যাদেশ জারীর মাধ্যমে বিডিএ গঠন করে তার কার্যক্রম শুরুরও দাবী এখানকার জনগণের।


